হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় সরকারি ছুটি ॥ মোটর সাইকেলসহ সকল যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদ লাভ করার জন্য ৪ আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএনপির এক নেতা তাকিয়ে আছেন ৪৭ হাজার ৮২০ জন ভোটারের প্রতি
এসএম সুরুজ আলী ॥ আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচন। নির্বাচনে ২০টি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। গতকাল দুপুরে ভোট গ্রহণের ইভিএম এর সকল সরঞ্জাম নিরাপত্তার মাধ্যমে ২০টি কেন্দ্রে পৌছানো হয়। এছাড়া প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিসাইডিং অফিস, পোলিং অফিসার, আনসার ও পুলিশ কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছেছে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত মিজানুর রহমান মিজান (নৌকা), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরস্কায়স্থ টিটু (নারিকেল গাছ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান (জগ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী (চামচ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম ইসলাম তরফদার তনু (মোবাইল ফোন)।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলোতে তাদের এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। এ নির্বাচনে ৪৭ হাজার ৮২০ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৮৩৮ জন ও মহিলা ২৩ হাজার ৯৮২ জন। মেয়র প্রার্থীদের শনিবার মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ করলেও গতকাল সোমবার পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী এলাকার মুরুব্বীয়ানসহ যুবক, মহিলাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ভোট প্রার্থনা করেছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু ৮টি কেন্দ্র ঝুকিপূর্ণ হিসেবে নিশ্চিত করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কেন্দ্রগুলো হলো- উমেদনগর সরকারি প্রাইমারী স্কুল, উমেদনগর শাহজালাল মাদ্রাসা, জামেয়া ইসলামিয়া টাইটেল মাদ্রাসা, চৌধুরী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গরুর বাজার সওদাগর কৃষ্ণধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিরদাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও রামচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। প্রশাসন ২০টি ভোট কেন্দ্রকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
এ ব্যাপারে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার খোরশেদ আলম জানান, হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ২০টি, ভোট কক্ষ ১৪১টি। ২০টি কেন্দ্রে ২০ জন প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ১৪১ জন ও পোলিং অফিসার ২৮২ জন দায়িত্ব পালন করবেন। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে প্রতি কেন্দ্রে ৮ জন পুলিশ, ১২ আনসার ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি ওয়ার্ডে ১জন করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আরো ১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও পুলিশ, র্যাব, বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ২০টি কেন্দ্রকেই আমরা অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে আমাদের ৪৬০ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশের ১০টি মোবাইল টিম ও ৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও আমাদের সিনিয়র অফিসাররা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। সব মিলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন যাতে উপহার দেয়া যায় সেই লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভার আয়তন ৯.৫ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে এটি ১ম শ্রেণীর পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভায় বসবাস করেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গত বছরের ২৮ নভেম্বর পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ। এরপর উক্ত পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র দিলীপ দাস।
আজ পৌর এলাকায় সাধারণ ছুটি ঃ আজ সোমবার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কারণে পৌর এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ফজলুল জাহিদ পাভেল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন- রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব এসএম শাহীন এ ছুটির আদেশ জারী করেন। নোটিশে বলা হয়েছে, নির্বাচনের দিন নির্বাচনী এলাকার সকল সরকারি আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকরি অফিস/প্রতিষ্ঠান/সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে নির্বাচনকালীন (সংশ্লিষ্ট) নির্বাচনী এলাকায় যদি কোন পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাহলে পরীক্ষার কেন্দ্র সমূহ ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারীগণ সাধারণ ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে এ শর্তে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো।
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : নির্বাচন উপলক্ষে পৌর এলাকায় সকল প্রকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ফজলুল জাহিদ পাভেল নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এতে বলা হয় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে ভোট গ্রহণের জন্য ২৩ জুন মধ্যরাত থেকে ২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় বেবিট্যাক্সি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জীপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, লঞ্চ, স্পীডবোট, ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করতে পারবে না। এছাড়া ২২ জুন দিবাগত মধ্যরাত থেকে ভোট গ্রহণের পরবর্তী দিন ২৫ জুন দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় মোটর সাইকেল চলাচল করতে পারবে না। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ওই সময়কালে মোটর সাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। তবে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, দেশী বিদেশী সাংবাদিক, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুত গ্যাস ডাক টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহারের জন্য এবং মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com