নূরুল ইসলাম মনি, বাহুবল থেকে ॥ গণপূর্ত বিভাগের অবহেলায় বাহুবল ট্রমা সেন্টারের মূল্যমান মালামাল নষ্ট ও চুরি হচ্ছে। ৬ বছরেও হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারছে না। ফলে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে হাড় ভাঙা রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা থেকে।
গণপূর্ত বিভাগের দাবি, নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ট্রমা সেন্টারের অনেক মালামাল ইতোমধ্যে চুরি ও নষ্ট হয়ে গেছে। এসব মালামাল মেরামত ও নতুন মালামাল সরবরাহ করার পর তা হস্তান্তর হবে। কবে নাগাদ হস্তান্তর হবে, সে উত্তর মিলছে না। ফলে সেবার দরজা খোলার প্রহরও ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। বিগত ২০১৪ সালে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ট্রমা সেন্টারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নামে সরকার দেশের ছয়টি মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য মহাসড়ক সংলগ্ন সুবিধাজনক স্থানে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে একটি ৩ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ট্রমা সেন্টারের সেবা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বেড ও ফার্নিচার সরবরাহ করে সরকার। কিন্তু অদৃশ্য কারণে অবকাঠামো হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি আটকা পড়ে গণপূর্ত বিভাগে। ৬ বছর হস্তান্তর কার্যক্রম আটকে থাকার করণে মূল্যবান মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্চা ও নিরাপত্তার অভাবে নষ্ট ও চুরি হচ্ছে।
হাসপাতাল এলাকার জামাল উদ্দিন নামে এক ঔষধ ব্যবসায়ী বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে অব্যবহৃত অবস্থায় মুল্যবান জিনিষপত্র গুলো নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে অত্র এলাকার অসহায় গরীব মানুষ অল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারতো। তাই ট্রমা সেন্টারটি দ্রুত চালু করার দাবি জানান তিনি।
বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা হাড়ভাঙা রোগী উপজেলার ভাদেশ্বর গ্রামের শামীম আহমেদ আক্ষেপের সাথে বলেন, বাহুবল ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে আমাদের ঢাকা কিংবা সিলেট গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো না। হাড় ভাঙা রোগীদের দুর-দুরান্তে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আমাদের মতো অসহায় গরীব রোগীদের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজের শরণাপন্ন হতে হয়। যার ফলে অনেকেই অকালে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রেজাউল বারী তুহিন বলেন, বিষয়টি অনেক পুরনো। আমিও এখানে এসেছি খুব বেশি দিন হয়নি। মূলত বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়ার কারণেই হস্তান্তর বিলম্বিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভবনটির কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। যে কারণে অনেক মালামাল চুরি হয়ে গেছে, অনেক কিছুই নষ্টও হয়েছে। আবার নতুন করে কাজ করতে হবে। মেরামত করতে হবে। সুতরাং আমার মনে হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি ভবনটি হস্তান্তর করা যাবে না।
বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ বাবুল কুমার দাশ বলেন, ভবনটির অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আমরা গণপূর্ত বিভাগে চিঠি ও মৌখিকভাবে বহুবার যোগাযোগ করেছি। তারা গেল জানুয়ারি মাসের মধ্যে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি। গণপূর্ত বিভাগ অবকাঠামো ও মালামাল বুঝিয়ে দিলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেবা কার্যক্রম চালু হবে।
গণপূর্ত বিভাগের অবহেলায় ৬ বছরেও হস্তান্তর হয়নি অবকাঠামো
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com