আজ ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় নকলের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে এসএসসি, দাখিল এবং জেএসএসসি ও জেডিসিসহ সমমান অন্যান্য পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নকলের সুযোগ দেওয়া, শিক্ষক কর্তৃক নকল সাপ্লাই ও উত্তরপত্র সরবরাহসহ বিভিন্ন অভিযোগে এবং সর্বশেষ পঞ্চাশ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ ৩ জনকে সাজা দেওয়ার পরই প্রশাসন কঠোর বার্তা প্রদান করে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার সকল শিক্ষক, কেন্দ্র সচিব ও হল সুপারদের ডেকে এ বার্তা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ। কোন ভাবেই নকলকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না এবং কোন শিক্ষক এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার কথা তিনি শিক্ষকদের জানিয়ে দেন।
উপজেলায় ৭টি কেন্দ্রে এবং ৯টি ভেন্যুতে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা চলছে। প্রতি বছরই জুনিয়র ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় শিক্ষকরা পরীক্ষার শুরুতেই উত্তরপত্র সরবরাহ এবং নকল করার সুযোগ দেন বলে অভিযোগ উঠে। শিক্ষকরা পরীক্ষার শুরুতেই পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তরপত্র সরবরাহ করে থাকেন এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। পাশাপাশি কিছু কিছু অভিভাবক পরীক্ষার সময় তাদের ছেলে মেয়েকে ভাল শিক্ষার্থীর পাশে সিট দেওয়া এবং সহযোগিতার জন্য শিক্ষকদের চাপ দিয়ে থাকেন। এমন অভিযোগও ছিল। সবচেয়ে বড় অনিয়ম হচ্ছে অনেক কেন্দ্রে বা ভেন্যুতে বোর্ডের নিয়ম না মেনে শিক্ষকদের ইচ্ছেমতো সিট ফেলানো এবং নির্ধারিত বিষয়ের পরীক্ষার দিন ওই বিষয়ের শিক্ষক দায়িত্বে না থাকার কথা থাকলেও তা মানা হতো না। এছাড়া কেন্দ্র সচিবদের চাপ দিয়ে পছন্দের শিক্ষার্থীদের রুমে দায়িত্ব না থাকলেও শিক্ষকরা প্রবেশ করে উত্তরপত্র দেওয়ার চেষ্ঠা করে থাকেন। এসব বিষয় নিয়ে অভিভাবকরা বিগত দিনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। গত এসএসসি পরীক্ষায়ও জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করে। কিন্তু তার পরও এক শ্রেণির শিক্ষক পরীক্ষা শুরুর প্রথম ১০ মিনিটেই উত্তরপত্র লিখে পরীক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যা কেন্দ্র সচিব কিংবা হল সুপাররা জানলেও প্রভাবশালীদের চাপে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। এছাড়া বিভিন্ন জনের তদবীরের কারণেও শিক্ষার্থীদের বোর্ডের নিয়ম ভেঙ্গে, সিট প্ল্যান ভেঙ্গে আসন বিন্যাস করা হয়। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। এনিয়ে তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন অভিভাবক মহল।
নানা অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রশাসন চলতি বছর স্কুলের শিক্ষার্থীদের শতভাগ অন্য স্কুলে ভেন্যু করে পরীক্ষা চালু করা হয়। এ অবস্থায় উপজেলার ৫টি কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র ভেন্যুতে দেওয়া হয়। এনিয়ে রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। এ বিষয়টি বোর্ড এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নজরে এলে চলতি বছর শতভাগ নকলমুক্ত পরীক্ষা নিতে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেয়। আজ মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষায় চুনারুঘাট উপজেলায় ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ সকল কেন্দ্র সচিব, হল সুপার ও শিক্ষকদের ডেকে এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ অবস্থায় আজকের গণিত পরীক্ষা নিয়ে আতংকে রয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, রবিবার উপজেলার পঞ্চাশ স্কুল এন্ড কলেজে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তরপত্র সরবরাহ করার কারণে কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব নাসির উদ্দিন, ইংরেজি শিক্ষক দ্বিপন চন্দ্র পাল এবং কম্পিউটার অপারেটর কামাল উদ্দিনকে ৬ মাসের করে কারাদন্ড দেওয়া হয়। সহকারি কমিশনার মাসুদ রানা এ দন্ডাদেশ দেন। একই সাথে কেন্দ্র থেকে উত্তর লেখা প্রশ্ন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় চুনারুঘাটে তোলপাড় শুরু হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা জানান, দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা এবং নকল সরবরাহে সহযোগিতা করার অপরাধে পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০ এর ১২ ধারায় তিন শিক্ষককে ৬ মাসের করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নকলের ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। সরকারও এ ব্যাপারে কঠোর। শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার বাতিঘর। বাতিঘরের আলো নিভে গেলে রাষ্ট্র কোথায় যাবে।