হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ ভিক্ষুক রাজা মিয়া, বয়স অনুমান ৫০ বছর। জীর্ন শীর্ন রোগা দুর্বল লোক। তার মুল বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানার তরুলমত গ্রামে। অভাবের তাড়নায় প্রায় ৮/১০ বছর পূর্বে চলে আসেন শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায়। ভিক্ষা করে শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশে ছোট ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন। পরিবার পরিজন কেউ সাথে নেই। একা একা নিঃসঙ্গ মানবেতর জীবনযাপন করতেন তিনি। স্টেশনে বসেই ভিক্ষা করতেন। সাথে থাকতো কাগজে লেখা একটি চিরকুট। চিরকুটে লেখা আমার নাম রাজা মিয়া, আমি অসুস্থ, এই নাম্বারে দয়া করে জানিয়ে দিন। ০১৭২৪-৫২১৪০৭, কুমারখালি থানা, জেলা-কুষ্টিয়া। গত ০৬ ফেব্রুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনের পাশে ঝুপড়ি ঘরে শ্বাস-কষ্ট জনিত কারনে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্টেশনে তার ভিক্ষুক এক সহকর্মী তাকে সিএনজি দিয়ে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে তিনি মারা যান। ভিক্ষুক রাজা মিয়ার কোন আত্মীয় স্বজন না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলীকে অবহিত করেন। অফিসার ইনচার্জ থানার এসআই খোরশেদ আলম সহ হাসপাতালে গিয়ে মৃত রাজা মিয়ার কোন আত্মীয় স্বজন না থাকায় চিরকুটে লেখা মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে কুষ্টিয়া থেকে তার স্ত্রী ফোন ধরেন। তার স্ত্রীকে রাজা মিয়ার মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। তার স্ত্রী জানান, রাজা মিয়া পূর্ব থেকে অসুস্থ। মৃতদেহ হবিগঞ্জ থেকে কুষ্টিয়ায় নেওয়ার মত আর্থিক সামর্থ্য তার নেই। পরবর্তীতে অফিসার ইনচার্জ বিষয়টি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাকে (বিপিএম-পিপিএম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রবিউল ইসলাম পিপিএম কে অবগত করেন। তাদের অনুমতিক্রমে তিনি মানবিক কারনে থানার অন্যান্য অফিসারদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি এ্যাম্বুলেন্স রিজার্ভ করে থানার একজন পুলিশ সদস্য সহ মৃতদেহ কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে প্রেরণ করেন। কুমারখালি থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে শনিবার সকালে মৃতদেহ রাজা রাজা মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যান। কুমারখালি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রাজা মিয়ার মৃতদেহ তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং দাফন কাফন সম্পন্ন হয়।
জানা যায়, মৃত রাজা মিয়ার ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। রাজা মিয়া আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল ছিলেন। ভবঘুরে হয়ে বিগত ৭/৮ বছর যাবত শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকায় ভিক্ষা করতেন। পুলিশের মানবিকতা ও সহযোগিতার কারনে রাজা মিয়ার মত একজন অসহায় ভিক্ষুকের লাশ কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে দাফনের সুযোগ পাওয়ায় তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন হবিগঞ্জ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।