মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআনুল কারীমে এরশাদ করেন ‘আহাল্লাল্লাহুল বাইআ ওয়া হাররামার রিবা’ অর্থাৎ আমি ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং সুদ প্রথাকে করেছি হারাম। ব্যবসা যে কোন দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এবং নীতিগত ব্যবসা উত্তম ইবাদত। ব্যবসার অন্যতম একটি অঙ্গ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য, যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের অধিকার সংরক্ষণ করে। বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। কোন পদক্ষেপই যেন এর সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসা বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় সুচিন্তিত কল্যাণধর্মী ও সুদূরপ্রসারী বাজার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা, অনাকাক্সিক্ষত মূল্যস্ফীতি রোধ ও বাজারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা দূরীকরণে ইসলামের সেই ব্যবসায়িক নীতিমালা বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।
মজুদদারী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফা লাভের জন্য মজুদদারীকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে তিরমিজি শরীফের মধ্যে এসেছে- হযরত মামার ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ফজল (রাঃ) বলেন- আমি রাসুল (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে, ‘পাপাচারী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ মজুদদারী করে না।’ অন্যত্র রাসুল (সঃ) এরশাদ করেন- আমদানীকারক বা উৎপাদনকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হয় এবং মজুদদার হয় অভিশপ্ত। (দারেমী হাঃ নং ২৪৩৩)
ইবনে মাজাহ শরীফের একটি হাদিসে রাসুল (সঃ) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রেখে মুসলমানদের কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তাকে কুষ্ঠরোগ ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি প্রদান করেন।
মজুদদারের হীন মনমানসিকতার প্রতি তিরস্কার করে রাসুল (সঃ) এরশাদ করেন- ‘মজুদদার কতইনা নিকৃষ্ট! দ্রব্যমূল্য হ্রাসের খবর তার কাছে খারাপ লাগে আর মূল্যবৃদ্ধির খবর তার মনে আনন্দ দেয়।’
অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- মজুদদারের উপর আল্লাহ্ তা’আলা, ফেরেস্তাকুল ও সমগ্র মানব জাতির অভিশাপ। তার ফরজ, ওয়াজিব ও নফলসহ কোন ইবাদতই আল্লাহ্ কবুল করেন না। (ফতোয়ায়ে শামী- ৬/৩৯৮)
ফতোয়ায়ে আলমগীরির ৩য় খন্দের ২১৪ পৃষ্ঠায় এসেছে কোন পণ্য (খাদ্য, অখাদ্য) মজুদ রাখার কারণে যদি সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে সরকার মজুদদারকে বাধ্য করবে সাধারণ মূল্যে অথবা যতটুকু বেশি মূল্যে মানুষ মেনে নেয়, সেই মূল্যে বিক্রি করতে।
আল মুযারাআত গ্রন্থে এসেছে- ফোকাহায়ে কেরাম একমত যে, প্রয়োজনে মজুদদারের সম্মতি ছাড়াই বিচারক বা সরকার খাদ্যদ্রব্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবে।
উল্লেখ্য, আমদানীকারক বা উৎপাদনকারী তার পারিবারিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য বা পণ্য সামগ্রী মজুদ রাখা শরীয়ত স্বীকৃত।