স্টাফ রিপোর্টার ॥ কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের ছাত্রীকে জাপটে ধরার ঘটনায় পিতাপুত্রসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নির্যাতিতা কলেজ ছাত্রী বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর থানায় এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মির্জাপুর গ্রামের আসাদ আলী ও তার পুত্র মেহেদী হাসান, আলা উদ্দিনের ছেলে জহুর উদ্দিন, আব্দুল হাই ও তার পুত্র শোভন ওরফে সেবুল এবং আলীরাজকে আসামী করা হয়। এদিকে সোমবার বিকেলে কলেজ ছাত্রীকে জাপটে ধরার ঘটনায় এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে ইভটিজারদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু গতকাল নির্যাতিতা কলেজছাত্রী বাদী হয়ে বখাটে ও তার সহযোগীসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করে। ফলে ঘটনাটি এখন নতুন দিকে মোড় নেয়।
প্রসঙ্গত, প্রতিদিনের ন্যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি গ্রামের আব্দুর রউফের কন্যা হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্রী কলেজের ক্লাস শেষে বিকেলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সে হবিগঞ্জ শহরের নতুন খোয়াই মুখ এলাকা থেকে টমটমযোগে মির্জাপুর লাটুম বাজারে যায়। সেখান থেকে নছরতপুর-চাঁন্দপুর সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে তার গ্রামে যাচ্ছিল। সড়কের মধবর্তী চৌড়ারখাড়ায় পৌঁছলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা মির্জাপুর গ্রামের আসাদ আলীর ছেলে মেহেদী, আলাউদ্দিনের ছেলে জহুর আলী, আব্দুল হাই’র ছেলে শোভন, মন্নর আলীর ছেলে শামীম মিয়া মেয়েটিকে একা পেয়ে প্রথমে তার মোবাইল নাম্বার চায়। মেয়েটি মোবাইল নাম্বার দিতে রাজি না হলে বখাটেরা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে কথাবার্তা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে বখাটেরা মেয়েটিকে জাপটে ধরে তার জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলে। এ সময় বখাটেরা মেয়েটির মুখে গামছা বাঁধতে চাইলে মেয়েটি শোর চিৎকার করে। মেয়েটির চিৎকার শোনে রাস্তার নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা এগিয়ে এসে বখাটেদের হাত থেকে মেয়েটিকে বাঁচাতে চাইলে বখাটেরা তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় বখাটেদের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের স্বজনরাও শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় শ্রমিকদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মেয়েটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়ে তার কাছে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দেয়। সাথে সাথে তিনি হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুক আলীকে বিষয়টি জানান। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির নির্দেশে এসআই মন্তোষ দাস, এসআই শাহিদ মিয়াসহ একদল পুলিশ মির্জাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আলী হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে। সোমবার আটক আলী হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর পরই বিষয়টি শালিসে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। মির্জাপুর গ্রামের মুরুব্বীয়ান লুকড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের মধ্যস্থতায় শালিস বৈঠক আয়োজন করেন। সোমবার বিকেলে মির্জাপুর গ্রামে আব্দুল আলী সর্দারের বাড়িতে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আব্দুল লতিফ কালন মেম্বার। শালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, রফিক মিয়া, গনি মেম্বার, আবু তাহের মেম্বারসহ উভয় গ্রামের মুরুব্বীয়ান। শালিসে কলেজ ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় তার সামাজিক ক্ষতিপূরণ ও তাকে বাঁচাতে এসে আহত ৪ ব্যক্তির চিকিৎসার খরচ বাবদ মোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়।