এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর গ্রামে মৃত পিতার সম্পত্তি নিয়ে সন্তানদের ১৪ বছরের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে মরহুম হাজী সুন্দর আলীর ৫ কন্যার মাঝে আবারও সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হলো। এ নিষ্পত্তি করে দিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম।
সূত্র জানায়, নিজামপুর গ্রামের মরহুম হাজী সুন্দর আলীর কোন পুত্র সন্তান নেই। তিনি ৫ কন্যা সন্তান রেখে প্রায় ১৪ বছর পূর্বে মারা যান। তার কন্যারা হলেন- জিন্নাতুন নেছা, আপ্তাবুন নেছা, ছালেখা খাতুন, আম্বিয়া খাতুন ও সাহেদা খাতুন। হাজী সুন্দর আলী জীবিত থাকাবস্থায় তার সহায় সম্পত্তি কন্যা সন্তানদের মধ্যে অনেকাংশই ভাগ করে দেন। তিনি বাড়িতে রেখে যান ১ম কন্যা জিন্নাতুন নেছাকে। অন্যান্য মেয়েকে বিয়ে দেন একই গ্রামসহ পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোতে। হাজী সুন্দর আলীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয় ওয়ারিশানদের মাঝে দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের কারণে তার মেয়েরা একে অন্যের সাথে কথা বলতেন না। চোখের সামনে একে অপরের সাথে দেখা হলেও কথা বলতেন না। এ নিয়ে তারা চরম ঝগড়া-বিবাদ, জমি দখল, বাড়িঘর ভাংচুর, রাস্তা অবরোধ ও একাধিক মামলা মোকাদ্দমায়ও জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তাদের এ বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার উদ্যোগ গ্রহণ করেও ব্যর্থ হন। ৭ আগস্ট সুন্দর আলীর ১ম কন্যার ছেলে মোঃ মহিবুর রহমান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) এর কার্যালয়ে এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম উভয়পক্ষকে তার কার্যালয়ে আসার নোটিশ প্রদান করেন। উভয়পক্ষ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ তার কার্যালয়ে হাজির হন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উভয়পক্ষের জমির দলিল ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করেন। গতকাল শনিবার উভয়পক্ষ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ৩ জন আইনজীবীর উপস্থিতিতে দীর্ঘদিনের চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম। তিনি উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সিদ্ধান্তগুলো হলো- উভয়পক্ষ তাদের মধ্যে চলমান মামলা মোকদ্দমা নিজ নিজ উদ্যোগে বিজ্ঞ আদালতে আপোষনামা দাখিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবেন। ২য় পক্ষগণ ১ম পক্ষের ভাঙ্গা দেয়াল মেরামত করে দিবেন। ১ম পক্ষ ২য় পক্ষের নিকট হতে রাস্তার জমি বিক্রি করা বাবদ গ্রহণকৃত ৯৮ হাজার টাকা ফেরত দিবেন। রাস্তার জমি উভয়পক্ষ চলাচলে কোনরূপ বাধা বিরোধ থাকবে না। ২য় পক্ষের নামে ভুলক্রমে রেকর্ড হয়ে যাওয়া ১ম পক্ষের ১০ শতক জমি ২য় পক্ষ ফিরিয়ে দিবেন। বিরোধপূর্ণ ১৩৭ শতক জমির দলিল মূলে ১ম পক্ষকে ৯৫ শতক এবং ২য় পক্ষকে ৪২ শতক জমি উপস্থিত লোকজনের উপস্থিতিতে আমিনের মাধ্যমে মেপে বুঝিয়ে দিবেন। বিষয়গুলি বাস্তবায়ন করার জন্য উপস্থিত হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ৩ জন সদস্য ও স্থানীয় ৬ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন। এরই মাধ্যমে দীর্ঘ ১৪ বছরের চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইতিমধ্যে অনেক বিরোধ তার কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে নিষ্পত্তি করেছেন।