গত ২৪ আগস্ট দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় ‘বাহুবলে দুর্নীতির অভিযোগে পোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচি বয়কট করলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান বললেন মৎস্য কর্মকর্তা ৩০৪ কেজি পোনা মাছের টাকা আত্মসাত করেছেন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা হক পত্রিকার সম্পাদককে মোবাইল ফোনে সংবাদটি সঠিক নয় বলে জানান। তিনি বলেন সরকার নির্ধারিত টাকার পোনা মাছ সঠিকভাবে পানিতে অবমুক্ত করা হয়েছে। এরপর গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ইমেইল এড্রেস থেকে মৎস্য কর্মকর্তা এ সংবাদের বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাঠান। নি¤েœ মৎস্য কর্মকর্তার বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
বাহুবল উপজেলায় পোনা মাছ অবমুক্তকরণে কোন অনিয়ম হয়নি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজের টেন্ডারবাজি না করতে পেরে, পোনা অবমুক্তকরণের সরকারি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করে, নিজের ফেইসবুকে পোনা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকার এবং বাহুবলের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং মানুষের মাঝে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ…..
পোনামাছ অবমুক্ত কার্যক্রম নিয়ে কিছু কথাঃ বাহুবল উপজেলায় প্লাবনভূমি/বর্ষা প্লাবিত ধানক্ষেত/প্রাতিষ্ঠানিক জলাশয়ে পোনা অবমুক্তির জন্য এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। বরাদ্দ প্রাপ্তির পর পোনামাছ অবমুক্ত কার্যক্রম ২০১২ এর নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে বিগত ০৫/০৮/২০১৯ ইং একটি সাধারণ সভা আহবান করা হয়। উক্ত আলোচনা সভায় পোনামাছ সংগ্রহ কমিটিকে জানানো হয় যে, নীতিমালায় উল্লেখিত আছে পোনামাছ সংগ্রহ কমিটি সরকার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে পোনামাছ সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে পোনা সংগ্রহ ও ক্রয়ের জন্য কোন দরপত্র বা কোটেশনের প্রয়োজন হবে না। যে ক্ষেত্রে সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে পোনা পাওয়া যাবে না সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট খামার ব্যবস্থাপকের প্রত্যয়ন নিয়ে পিপিআর ২০০৬ এবং ২০০৮ অনুসরণ করে পোনা সংগ্রহ করা যাবে। ০১/০৮/২০১৯ ইং তারিখ হ্যাচারি ম্যানেজার, কুর্শি হ্যাচারি কমপ্লেক্স, নবীগঞ্জ বরাবর চিঠি পাঠালে হ্যাচারি অফিসার পোনা সরবরাহ করতে পারবেন বলে জানান। সরকারি হ্যাচারি থেকে ৩০০ টাকা কেজি ধরে ৩৩৪ কেজি পোনা সরবরাহ করতে পারবেন বলে হ্যাচারি অফিসার আমাদের লিখিত জানান। তারপর সভায় উপস্থিত সকল সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারি হ্যাচারি থেকে পোনামাছ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জলাভূমি নির্বাচন কমিটি নিম্নোক্ত জলাশয়ে মাছ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়-
১. ঘুঙ্গিয়াজুরি হাওর -২১০ কেজি, ২. করাঙ্গী নদী- ৪৪ কেজি, ৩. উপজেলা পরিষদ পুকুর-৪০ কেজি, ৪. দীননাথ ইনস্টিটিউশন- ২০ কেজি, ৫. কালাপুর আশ্রয়ন প্রকল্প- ২০ কেজি। হবিগঞ্জ -১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্যের দেয়া পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২৩ আগস্ট ২০১৯ ইং বাহুবল উপজেলায় বিভিন্ন জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সংসদ সদস্যের দেয়া সময় অনুযায়ী সকাল ১০ টার দিকে উনি কালাপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে পোনামাছ অবমুক্ত কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী উপজেলা থেকে ইউএনও এর প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পোনামাছ অবমুক্ত কমিটির সম্মানিত উপদেষ্টা বাহুবল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সহ আমি রওয়ানা দেই। পথিমধ্যে জানতে পারি এমপি মহোদয়ের আসতে একটু দেরি হবে, উনার নির্দেশমতে আমরা যেন অন্য কোন স্পটে গিয়ে পোনামাছ অবমুক্ত শুরু করি। সেই অনুযায়ী আমরা আমাদের রেজুলেশনে উল্লেখিত ঘুঙ্গিয়াজুরি হাওরে পোনা ছাড়ার জন্য রওয়ানা দেই। স্নানঘাট ইউনিয়নের বাগদাইর নামক জায়গায় গিয়ে সকলের উপস্থিতিতে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মেশিনের সঠিক মাপ দেখে খসড়া কাগজে লিখে সর্বমোট ২০৫ কেজি পোনা অবমুক্ত করি (ভিডিও সংযুক্ত)। ঘুঙ্গিয়াজুরি হাওরে পোনা অবমুক্তির পর আমরা জানতে পারি এমপি মহোদয় উপজেলায় এসে পোনামাছ অবমুক্ত করবেন। সেই অনুযায়ী আমরা গাড়ি নিয়ে উপজেলায় চলে আসি। উপজেলায় আসার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসায় চলে যাওয়ায় ইউএনও মহোদয় এসে আমাদের সাথে শরিক হোন। আমরা সবাই মিলে ডিজিটাল মেশিন দিয়ে মেপে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাব করে ৪০ কেজি পোনামাছ উপজেলা পরিষদ পুকুরে ছাড়া হয়। তারপর মাননীয় সংসদ সদস্য উপজেলায় আসলে উনি ক্বাসিমুল উলুম মাদ্রাসায় ঢোকে পড়েন যেখান আমাদের রেজুলেশন অনুযায়ী পোনামাছ ছাড়ার কোন শিডিউল ছিল না। পোনামাছ অবমুক্ত কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এবং মাননীয় সংসদ সদস্যের ইচ্ছার প্রেক্ষিতে উক্ত মাদ্রাসা পুকুরে ১০ কেজি পোনা ছাড়া হয়। তারপর এমপি মহোদয় দীননাথ ইনস্টিটিউট হাইস্কুলে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এর উপস্থিতি সহ অন্যান্য সকলের উপস্থিতিতে ২০ কেজি পোনামাছ অবমুক্ত করেন। তারপর উনি বাহুবল বাজার মসজিদের পাশে করাঙ্গি নদীতে ৪৪ কেজি পোনামাছ অবমুক্ত করেন এবং পোনা মাছের আকার দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। জুমার নামাজের সময় হওয়ায় এমপি মহোদয় চলে যান। এদিকে ইউএনও মহোদয় এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গাড়ি নিয়ে আরেকটি প্রোগ্রামে চলে যান। কালাপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে আমি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান যাওয়ার কথা ছিল। জুমার নামাজ থাকায় আমি এবং ভাইস চেয়ারম্যান না গিয়ে আমার অফিসের ক্ষেত্র সহকারী শরিফ উদ্দিন এবং স্নানঘাট ইউনিয়নের স্থানীয় মৎস্য সম্প্রসারণ প্রতিনিধি তালেব আলীকে পাঠাই কালাপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ২০ কেজি পোনামাছ ছেড়ে আসার জন্য। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার পর তারা লোহার একটা মেশিন দিয়ে মেপে দেখে পোনামাছ এর ওজন হইছে ১৫ কেজি। অইখানে থাকা এক ব্যাক্তি উনি আমাকে ফোনালাপে বলেন আমরা ১৫ কেজি পোনামাছ বুঝে পেয়েছি তাই ১৫ কেজি পোনামাছ বুঝে পাওয়ায় স্বাক্ষর দিব। আমি উনাদের বলি যদি ৫ কেজি মাছ কম হয়ে যায় সেটা আপনারা আগামীকাল পেয়ে যাবেন কারণ অন্য একটা স্পট ক্বাসিমুল উলুম মাদ্রাসায় অতিরিক্ত পোনা ১০ কেজি বেশি ছাড়ায় এই ৫ কেজির ঘাটতি দেখা দেয়। উল্লেখ্য যে প্রত্যেকটি জলাশয়ে পোনামাছ ছাড়ার পর রেজুলেশনে উল্লেখিত সঠিক পোনা বুঝে পেয়েছেন মর্মে প্রতিষ্ঠান বা জায়গায় উপস্থিত ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার সহ স্বাক্ষর আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এতগুলো বিষয় স্পষ্ট হওয়ার পরেও একজন জনপ্রতিনিধির ফেইসবুক স্ট্যাটাসের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা নিউজ করছেন কিন্ত কেউ আমাকে বা অত্র পোনামাছ অবমুক্ত কার্যক্রমে সব স্পটে উপস্থিত থাকা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নাই। একজন রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে উপজেলায় এলাকার মানুষের সেবা প্রদানের জন্য আমরা কাজ করি। সুতরাং সঠিক বিষয় উপলব্ধি না করে এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের মানসম্মান হেয় না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ রইল। @মৎস্য কর্মকর্তা
উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের টেন্ডারবাজি না করতে পেরে ফেসবুকে পোনা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com