স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য, মহানগর দর্পন সম্পাদক, বিশিষ্ট সমাজসেবী মাওলানা ফজলুল করিম আজাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার শেখের মহল্লা গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বিকেলে নগরীর মিরাবাজারস্থ শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া প্রাঙ্গণে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জামেয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল সাবেক এমপি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, কর্ণেল সৈয়দ আলী আহমদ (অব.), অধ্যাপক ফজলুর রহমান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা মশাহিদ উদ্দিন এবং মরহুমের কনিষ্ঠ পুত্র তাহমিদ হাসান।
মাওলানা ফজলুল করিম আজাদ গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় নগরীর ইবনে সিনা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়ে ও জামাতা আজিজুল হক কয়সরসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর। মাওলানা আজাদের স্ত্রী রাজিয়া নিলুফার আজাদ বিশিষ্ট লেখিকা এবং তাঁর বড় ছেলে আমিমুল আহসান তানিম লন্ডনের বাংলা গণমাধ্যমের একজন প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিক ও টিভি প্রেজেন্টার হিসেবে সক্রিয় ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মাওলানা ফজলুল করিম আজাদ হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার শেখের মহল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক মরহুম মাওলানা ইসমাইল যিনি ছিলেন একজন বিপ্লবী আলিম। ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময় তিনি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অবরুদের ডাক দেন এবং একই দিনে তিনি গ্রেফতার হন এবং প্রায় ৮ মাস কারাবরণ করেন।
মাওলানা আজাদ ১৯৭২ সালে ৬টি লেটারসহ প্রথম বিভাগে দাখিল পাশ করেন। শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এমএম ও মদনমোহন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে চুনারুঘাট থেকে গ্রেফতার হন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বানিয়াচং থানা সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৭-এ তিনি ছাত্র শিবিরে ও ১৯৮০ সালে জামায়াতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদান করেন তিনি বাংলাদেশ জামায়াতের সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং মজলিসে সূরার অন্যতম সদস্য ছিলেন। মাওলানা আজাদ ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ) থেকে জামাত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিতদ্বন্দিতা করেন। ১৯৮৩-তে শাহজালাল জামেয়ায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে জামেয়া থেকে অব্যাহতি নিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি খামার গড়ে তুলেন। এক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষনামুলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
এদিকে, মাওলানা ফজলুল করিম আজাদের ইন্তেকালের সংবাদে লন্ডনে তাৎক্ষণিক আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পূর্ব লন্ডনের আল হুদা সেন্টারে ২৩ অগাস্ট বাদ মাগরিব অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা রাখেন লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রাচীন সংবাদপত্র সুরমার সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট ফরিদ আহমেদ রেজা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় জয়েন সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল কাদের সালেহ, টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী সিলেট মহানগরীর সাবেক সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম শাহীন, বিশিষ্ট আইনজীবি বিশ্বনাত এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে সাবেক সভাপতি মির্জা আসাব বেগ, কমিউনিটি নেতা সৈয়দ সালেহ, লিবডেম নেতা পীর কুতুব, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি এফ কে এম শাজাহান।
আলোচনায় বক্তারা ফজলুল করিম আজাদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোচনা করেন। তারা বলেন আজাদ ছিলেন সমাজের সকল দল এবং মতের মানুষের সাথে ছিল তাঁর ভাল সম্পর্ক। তার চাল চলন, কথা বার্তা, বক্তৃতা, দৈহিক গঠন ও পোষাক পরিচ্ছেদ সব কিছুই ছিল আকর্ষণীয়। তিনি সিলেটে ছাত্র ইসলামী আন্দোলন ও বৃহত্তর আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে ঈর্ষণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। আশির দশকে রাজনৈতিক ভূমিকা পালনে তার কোন জুড়ি ছিল না। এক সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা মিছিল, সংগ্রাম এবং শ্লোগানের রাজপুত্র যিনি জীবনের চেয়েও ভালবেসেছিলেন ইসলামী সমাজ বিপ্লবের আন্দোলনকে, আশির দশকে সিলেটের সংগঠন, আন্দোলন আর সংগ্রামের অগ্র সৈনিক ছিলেন মাওলানা ফজলুল করীম আজাদ। পরে মরহুমের জন্য মাগফেরাত কামনা করে দুআ পরিচালনা করেন আয়োজক আব্দুল কাদের সালেহ।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তক মাওলানা ফজলুল করিম আজাদের দাফন সম্পন্ন
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com