এসএম সুরুজ আলী ॥ চুনারুঘাটের দেউন্দি চা বাগানের বাংলোতে ডাকাতি হওয়া মালামাল একদিন পরই উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩ ডাকাত আটকসহ ১টি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। পুলিশের এ ভূমিকা জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চুনারুঘাটের দেউন্দি চা বাগানের বাংলোর নৈশপ্রহরীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একদল মুখোশধারী ডাকাত বাংলোতে অবস্থানরত বাগানের কোম্পানীর মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনিমেষ গোলদারের বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় ডাক্তার অনিমেষ গোলদার, তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনদের হাত-পা বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতরা। এ অবস্থায় প্রথম দিকে ডাক্তার অনিমেশ গোলদার নাড়াচাড়া করলে তার মাথায় ২টি পিস্তল ধরে এক ডাকাত। এ সময় ডাকাতরা অনিমেষ গোলদারকে বলে কোন প্রকার চিৎকার করলে তোকে গুলি করে হত্যা করা হবে। নিজের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য চুপ হয়ে থাকেন ডাঃ অনিমেষ। ডাকাতরা তার স্ত্রীর হাত থেকে বেসলেট জোরপূর্বক খুলে নেয়। বাসা তছনছ করে স্বর্ণালঙ্কার, ২টি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাসহ ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর ডাক্তার অনিমেষ ও তার পরিবারের লোকজন চিৎকার করলে বাগানের লোকজন বাংলাতো আসেন। এ খবর পেয়ে সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান, অতিরিক্ত ডিআইজ জয়দেব কুমার ভদ্র, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাসহ পুলিশের কমকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এসময় ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, যে কোন মূল্যে ডাকাতি প্রতিরোধ করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশের ভুমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে ভাবেই কাজ করতে হবে পুলিশকে। এ ঘটনার পর পুরো জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। বিভিন্ন চেক পোস্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাতের জেলার বিভিন্ন রাস্তার পুলিশের টহল বাড়ানো হয়। পাশাপাশি দেউন্দি বাগানের ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নামে। সারা রাত সজাগ থেকে পুলিশের অভিযান রাস্তার টহল সবগুলো মনটরিং করছিলেন পুলিশ মোহাম্মদ উল্ল্যা। গভীর রাতে ঢাকা-সিলেট ভায়া মৌলভীবাজার মহাসড়কের কামাইছড়া এলাকায় টহল পুলিশ একটি প্রাইভেট কারকে থামানোর জন্য সংকেত দিলে গাড়িটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে গাড়িটি আটক করে ৩ ডাকাতকে ধৃত করেন। তারা হচ্ছেন মো. শাহীন, ইমরান হোসেন ও ইয়াছিন ওরফে কালা বাবু। এ সময় পুলিশ স্বর্ণালঙ্কার, ২টি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা উদ্ধার করে। পুলিশ উদ্ধারকৃত মোবাইলে ডাক্তার অনিমেষ এর ছবি দেখে তাকে ও তার স্ত্রীকে খবর দিয়ে চুনারুঘাট থানায় নিয়ে আসেন। থানায় নিয়ে আসার পর ডাক্তার অনিমেষ ও তার স্ত্রী নিশ্চিত করেন মোবাইল ফোনসহ স্বর্ণালংকার ও মালামালগুলো তাদের।
পুলিশের সফল অভিযানে দেউন্দি চা বাগানের বাংলোর ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধার করা হয় এবং ৩ ডাকাতকে আটক করা হয়। আটককৃত ডাকাতদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেউন্দি টি কোম্পানীর মালিকানাধীন দেউন্দি ও লালচান্দ চা বাগানের দু’টি বাংলোয় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ২৮ জুলাই রাতে লালচান্দ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোফাজ্জল হোসেনের বাংলোয় ১০/১২ জনের একদল ডাকাত ডাকাতির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় তিনিসহ তার পরিবারের ৪ সদস্য আহত হন। গত শনিবার রাতে একই কোম্পানীর দেউন্দি চা বাগানের ডা. অনিমেষ গোলদারের বাসায় একদল ডাকাত প্রবেশ করে ডাক্তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ ৫ লাখ মালামাল লুটে নেয়।