পুলিশের সংকেত এড়িয়ে যাবার সময় প্রাইভেট কার থেকে ৩ ডাকাত আটক
এসএম সুরুজ আলী ॥ চুনারুঘাটে বন্দুকযুদ্ধে সোলইমান মিয়া ওরফে সুলেমান নামে এক ডাকাত নিহত হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের গাতাছড়া ব্রীজের উত্তর পাশের বাঁশঝাড়ের নিচে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোলাইমান মিয়া মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কালিপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ ওরফে নানুর ছেলে। এ সময় ডাকাতদের হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন এএসআই সাদেক, কনস্টেবল কবির মাহি ও কনস্টেবল শাহিনুল ইসলাম। তাদেরকে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি, ১টি গুলির খোসা, ৩টি ছোরা, ১টি লোহার রড, ১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বেলা আড়াইটায় নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম পিপিএম-সেবা।
পুলিশ সুপার জানান, রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাতাছড়া ব্রীজের উত্তর পাশে বাঁশঝাড়ের নিচে জঙ্গলে একদল ডাকাত ডাকাতি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে টহলরত এসআই আল-আমিন ও এসআই সাদেকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে ডাকাতরা তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এ সময় পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে সোলাইমান আহত হয় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও অস্ত্রসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কমলগঞ্জ থানায় ৭টি, বড়লেখা থানায় ২টি ও মৌলভীবাজারে ১টি মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে সে মৌলভীবাজারে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরো বলেন- রবিবার দিবাগত গভীর রাতে ঢাকা-সিলেট ভায়া মৌলভীবাজার মহাসড়কের কামাইছড়া এলাকায় টহল পুলিশ একটি প্রাইভেট কারকে থামানোর জন্য সংকেত দিলে গাড়িটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে গাড়িটি আটক করে ৩ ডাকাতকে আটক করেছে। তাদের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার চুনারুঘাটের দেউন্দি চা বাগানের চিকিৎসক অনিমেষ গোলদারের বলে নিশ্চিত করেছেন ডাক্তার দম্পতি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার হবিগঞ্জ) শেখ সেলিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম রাজু আহমেদ।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহে দেউন্দি টি কোম্পানীর মালিকানাধীন দেউন্দি ও লালচান্দ চা বাগানের দু’টি বাংলোয় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ২৮ জুলাই রাতে লালচান্দ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোফাজ্জল হোসেনের বাংলোয় ১০/১২ জনের একদল ডাকাত ডাকাতির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় তিনিসহ তার পরিবারের ৪ সদস্য আহত হন। গত শনিবার রাতে একই কোম্পানীর দেউন্দি চা বাগানের ডা. অনিমেষ গোলদারের বাসায় একদল ডাকাত প্রবেশ করে ডাক্তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ ৫ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান, অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাসহ পুলিশের কর্মকর্তারা। এসময় ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, যে কোন মূল্যে ডাকাতির ঘটনা প্রতিরোধে করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেভাবেই কাজ করতে হবে। এ ঘটনার পর পুরো জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।