হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেন ‘খন্দকার মোস্তাকের অনুসারীরা এখনো বেঁচে আছে, সেটা শায়েস্তাগঞ্জের ছালেক মিয়াকে দেখলেই বুঝা যায়’
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ছালেক মিয়া। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ তাকে দলীয় পদ অব্যাহতি প্রদান করে। সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ ইকবাল মঙ্গলবার মেয়র ছালেক মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের নোটিশ দেন। ওই অব্যাহতি প্রদানের পত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করা হয়। সাথে সাথে মেয়র ছালেক মিয়ার অব্যাহতির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এদিকে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে কারণ দর্শানো ও অব্যাহতি প্রসঙ্গ নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন মেয়র ছালেক মিয়া। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন- আমাকে যে কারণ দর্শানো ও অব্যাহিত প্রদানের নোটিশ দেয়া হয়েছে তা আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে অবগত হয়েছি। আমি জানি সাংগঠনিক বিধিতে একই পত্রে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও অব্যাহতি দেয়া যায় না। তা ভাল বুঝবেন যারা দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ রয়েছেন তারা। তিনি বলেন আমি পেছনের দিকে যেতে চাই, বিগত ১৮ জুন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার সহধর্মীনি সাবেরা সুলতানা হ্যাপি ভাইস চেয়ারম্যান পদে কলস প্রতিক নিয়ে অংশগ্রহন করে ৫১০ ভোট কম পেয়ে হেরে যায়। নির্বাচনে ফলাফলের পর আমি আর আমার সহধর্মীনি বাসায় বিশ্রাম নেই। এ অবস্থায় আমার বাসায় বৃষ্টির মত বোম ফুটানো হয়। এতে আমার সহধর্মীনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এ অবস্থায় আমি পরে অফিস করি এবং শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন কাজে তদারকি করার পাশাপাশি পৌরসভার মিটিংয়ে অংশ গ্রহন করি। এর পূর্বে ফেসবুক লাইভে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনসহ রাজনীতির অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে কথাবার্তা বলেন এবং এ প্রসঙ্গে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাস দৈনিক হবিগঞ্জের মুখের পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘সম্মানিত শায়েস্তাগঞ্জ পৌরবাসী প্রথমে আমার সালাম ও আদাব গ্রহন করবেন। অবশ্য আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন আমিও ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৫দিনের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ ও আমাকে আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে এবং আমাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোঃ আবু জাহির এমপি মহোদয়ের পক্ষ হতে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে আজ রাত ১১ ঘটিকায় আমি ফেসবুক লাইভে বক্তব্য প্রদান করিব। সবাইকে লাইভে বক্তব্য শোনার জন্য অনুরোধ অনুরোধ করা হলো।’
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ফেসবুক আইডিটি অন্য আরেকজন ব্যবহার করেন। এমপি মোঃ আবু জাহির সম্পর্কে তিনি কোন ধরণের বক্তব্য ফেসবুকে প্রদান করেননি। এই বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়ার এ ধরণের বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। অনেকেই এমপি আবু জাহিরের বিরুদ্ধে এ ধরণের মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করায় মেয়র ছালেক মিয়ার শাস্তি দাবি করেন। এর প্রতিবাদ জানিয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটাস প্রদান করেন। তিনি বলেন- ‘খন্দকার মোস্তাকের অনুসারীরা এখনো বেঁচে আছে, সেটা শায়েস্তাগঞ্জের ছালেক মিয়াকে দেখলেই বুঝা যায়। এমপি মোঃ আবু জাহির মহোদয় আপনার মতো মানুষকে মারার হুমকি দেবেন সেটা শুধু শায়েস্তাগঞ্জ নয়, হবিগঞ্জের মানুষ ভাল করেই বুঝেন। আপনার কারণে শায়েস্তাগঞ্জের ত্যাগী নেতারা রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছিলো। নিজের বউ ফেইল করেছে এজন্য আবুল তাবুল কথা বলছেন। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরো বলেন- শেখ হাসিনা যথাযর্থই বলেন- ত্যাগী কর্মীরা অভিমানী হয় কিন্তু বেইমান হয় না। শায়েস্তাগঞ্জের রাজনীতিতে আতাউর রহমান মাসুক মিয়ার অনেক ভূমিকা ছিল। তিনি অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারপরও তো দলের বিরুদ্ধে কিছু বলেন নাই। আপনার লজ্জা থাকলে এই কথাগুলো বলতেন না। পরিশেষে বলবো মানুষ যখন অতিরিক্ত পাপ করে তখন তার বিবেক চোখ অন্ধ হয়ে যায়। নিজের অবস্থান ভুলে যায় আর মনে রাখবেন এমপি আবু জাহির মহোদয়ের আপনার মতো হাজার হাজার কর্মী আছে।’
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- রাজনীতিতে গ্রুপিং লবিং থাকতে পারে। এ জন্য কারো এ ধরণের মিথ্যাচার করা ঠিক নয়। এমপি মোঃ আবু জাহির কি ধরণের লোক সেটি হবিগঞ্জবাসী ভাল ভাবেই জানান। মেয়র ছালেক মিয়া তার নিজের ফেসবুক আইডিতে এমপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন। আমি স্ক্রীন শট দিয়ে রেখেছি। এখন বাঁচার জন্য মেয়র ছালেক মিয়া তা অস্বীকার করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল জানান, মেয়র ছালেক মিয়া তার ফেসবুক আইডিতে এমপি মোঃ আবু জাহিরের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন মোঃ ছালেক মিয়া। পাশাপাশি তিনি পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি উন্নয়ন শুরু করেন। আলোচনায় আসেন শহরের প্রধান সড়কের উন্নয়ন করে। শায়েস্তাগঞ্জ থানার সামন থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত ওয়ানওয়ে সড়কে শহরের পুরনো চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। তার উন্নয়ন কর্মকান্ডে সহযোগিতা করেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। এরমধ্যে উন্নয়নের প্রায় সাড়ে তিন বছর চলে গেছে। এ উন্নয়ন কাজ শেষ না হতেই শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন আসে। এ নির্বাচনে তার স্ত্রী পৌর মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেরা সুলতানা হ্যাপী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। ১৮ জুনের নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে কন্ঠশিল্পী মুক্তা আক্তারের সাথে তিনি হেরে যান। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পৌর মেয়র ছালেক মিয়া ফেসবুক লাইভ করেন। শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এর পরেই শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মেয়র ছালেক মিয়াকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী সফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। একই সাথে তাকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।