মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও স্বীয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর স্মৃতি বিজড়িত বিধান কুরবানি। কুরবানিতে পশু জবাই এর আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এর দ্বারা আল্লাহ্ বান্দার অন্তর ও ত্যাগ যাচাই করে থাকেন। এই কুরবানির রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু বিধান। মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ এই বিধানের কতিপয় শাখা মাসআলা নিয়েই আজকের আলোচনা।
হেদায়া কিতাবের ভাষ্যমতে স্বাধীন, বালেগ, বিত্তবান (মালেকে নেছাব) মুকীম মুসলমানের পক্ষে তার নিজের কুরবানি আদায় করা ওয়াজিব। যাকাতের জন্য নেছাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর মজুদ থাকা শর্ত কিন্তু কুরবানির জন্য তা নয় বরং জিলহজ¦ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন দিন নেছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব।
কুরবানির পশুর বয়স ঃ গরু, মহিষ, বলদ-গাভীর জন্য দুই বৎসর পূর্ণ হতে হবে। উট ও উটনীর জন্য পাঁচ বৎসর পূর্ণ হওয়া শর্ত। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এক বৎসর পূর্ণ হওয়া শর্ত। তবে ছয় মাসের ভেড়া ও দুম্বা যদি মোটা তাজায় এক বছরের মত মনে হয় তবে তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ কিন্তু ছাগল মোটা তাজা হলেও এক বছর পূর্ণ হতেই হবে। খাসী করা পশু দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ বরং উত্তম। স্বভাবগতভাবে এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট পশু দ্বারাও কুরবানি জায়েজ। (ফতোয়ায়ে শামী ৫/২৮২ পৃঃ)
শিং ভাঙ্গা পশু দ্বারা কুরবানির বিধান ঃ যে সকল পশুর জন্মগতভাবে শিং নেই কিংবা মধ্যভাগে ভেঙ্গে গেছে তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ। তবে শিং যদি একদম গোড়া হতে উঠে পড়ে যায় তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে না। (ফঃ শামী- ৫/২৮০ পৃঃ)
দাঁতবিহীন পশুর কুরবানির বিধান ঃ অধিকাংশ দাঁত বিশিষ্ট পশু দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ তবে দাঁত মোটেই নাই যার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এরূপ পশু দ্বারা কুরবানি জায়েজ নেই। তবে দাঁত একেবারে ক্ষয় হয়ে যাবার পরেও যদি খাদ্য গ্রহণে কোন অসুবিধা না হয় এবং সুস্থ থাকে তাহলে কুরবানি জায়েজ হবে।
কুরবানির পশুর মাংস দ্বারা কোনরূপ উজরত বা পারিশ্রমিক দেয়া জায়েজ নেই।
কুরবানির মাংস বন্টনের সুন্নত নিয়ম হল- তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের এক ভাগ ফকির মিসকিনের মধ্যে বন্টন করা। সর্বোপরি কুরবানির মূল মক্বসুদ হতে হবে আল্লাহ্ ও রাসুল (সাঃ) কে খুশি করা।