হবিগঞ্জের বাজারে এসেছে নেপালী গরু

এসএম সুরুজ আলী ॥ পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে হবিগঞ্জে কোরবানীর গরুর বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। এবার জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় ৬৯টি গরুর বাজার হাট বসবে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮টি পশুর হাট রয়েছে। এছাড়াও যেসব হাট অবৈধভাবে বসানো হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। অবৈধ গরুর বাজার নিয়ন্ত্রণ, গরু বাজারের ক্রেতা, বিক্রেতাদের নিরাপত্তা জোরদারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে পশুর হাট, ইজারাদারদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় বসবেন পুলিশ সুপার। মতবিনিময় সভায় জানানো হবে কোন বাজারে কি ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় পশুর হাট হবিগঞ্জ পৌর গরু বাজার। এ বাজারে প্রতি বছর হাজার হাজার গরু উঠে। এর অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়। আর যে গরু এ বাজারে বিক্রি না হয়, সেই গরুগুলো জেলার অন্যান্য বাজার এবং সিলেট ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার পশুর হাটগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। গত মঙ্গলবার ঈদুল আযহার প্রথম গরু বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের নির্ধারিত স্থান পর্যন্ত গরু উঠেছে। এর মধ্যে বেশি গরু মাঝারী ও ছোট সাইজের উঠেছে। বড় সাইজের শতাধিক গরু উঠেছে। বড় সাইজের অর্ধ শতাধিক গরু প্রথম বাজারে বিক্রি হয়েছে। তবে মাঝারী ও ছোট সাইজের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। আজ শুক্রবার হবিগঞ্জ গরুর বাজারে গরুর হাট বসবে।
গরু’র পাইকারী ব্যবসায়ী বাহুবলের আহাদ মিয়ার ৬টি বড় সাইজের গরু ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ছোট বড় আরো মাঝারী ছোট সাইজের শতাধিক গরু বাজার বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন মঙ্গলবার ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল। যে সব ক্রেতারা এসেছেন তারা গরু’র দাম যাচাই করতে এসেছেন। এর মধ্যে যাচাই করার পর শতাধিক ক্রেতা গরু ক্রয় করেছেন।
পাইকারী বিক্রেতা হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়াকান্দি গ্রামের জবেদ আলী জানান, এবার বাজারে কোন ভারতীয় গরু না আসায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার দেশী গরুর দাম অনেক বেশি। তবে মঙ্গলবারের বাজারে ১৫/২০টি নেপালী গরু উঠেছে। এসব গরু নেপাল জন্ম হলেও লালন-পালন করে দেশীয় পদ্ধতিতে বড় করা হয়েছে। এগুলোর মাংস খেতে সুস্বাদু হবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা। তিনি বলেন, বাজারে ৫টি গরু নিয়ে এসেছিলেন, এর মধ্যে ছোট সাইজের ৩টি গরু ৬৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আগামী হাটে আরো বেশি গরু সংগ্রহ করে আনবেন বলে তিনি জানান। তবে তার দাবি গত বছর ছোট সাইজের যে ষাড় গরুটি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই গরুটি ৪০/৪২ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিটি বড় গরুতে গড়ে ৫/১০ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণে গ্রামাঞ্চলে এবার কোরবানী দাতার সংখ্যা অনেক কমে যেতে পারে। কারণ ৫০ হাজার টাকার গরু ক্রয় করতে হলে কৃষককে ১শ’ মণ ধান ধান বিক্রি করতে হবে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মজনু মিয়া জানান, প্রতি বছরই ঈদের বাজারে গরু ক্রয় করতে এ বাজারে আসেন। তিনি ২টি গরু’র দাম আড়াই লাখ টাকা বলেছেন। কিন্তু পাইকারি বিক্রি করতে রাজী হননি। তিনি মনে করেন বড় সাইজের গরুতে এবার ১০/১৫ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। সঠিক দাম হলে তিনি গরু ক্রয় করবেন। গরু বাজারের হাসিলদার আব্দুল মালেক চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার ছোট, বড় ও মাঝারী সাইজের শতাধিক গরু বিক্রি হয়েছে। শুক্রবারের বাজারেও প্রচুর গরু উঠোর সম্ভাবনা রয়েছে এবং আগামী মঙ্গলবার পুরোদমে গরু বিক্রি হবে।
হবিগঞ্জ শহরের গরু বাজারের ইজারাদার মুকুল আচার্যী জানান, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। দূরের গরু বিক্রেতাদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার গরুর বাজারে ১ লাখ, দেড় লাখ ২ লাখ, আড়াই লাখ টাকা দামের গরু বিক্রি হয়েছে। প্রতি ১ হাজারে ১শ টাকা ও সর্বোচ্চ হাসিল নেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৮শ’ টাকা। তিনি বলেন, এ বাজারে আজ শুক্রবার ও মঙ্গলবার ঈদের হাট বসবে। ঈদের আগের রাতে গরু বিক্রি করা হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, জেলার সকল গরু বাজারে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক দিয়ে যাতে গরু বিক্রেতারা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারেন এজন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআই-ওয়ান কামাল উদ্দিন জানান, এবার হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় ৬৯টি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট রয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জে ১টি পশুর হাট রয়েছে। আর যে সব স্থানে অবৈধ হাট বসবে সেখানে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। হবিগঞ্জ শহরের প্রধান গরু বাজারে প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার গরু বিক্রি হবে। ঈদের আগের দিন রাতেও গরু বিক্রি হবে। লাখাই’র বামৈ ও আজমিরীগঞ্জ গরু বাজারে প্রতি রবিবার, করাব বাজারে শুক্রবার, নবীগঞ্জের জনতার বাজারে শনিবার, নবীগঞ্জ পৌর গরু বাজারে মঙ্গলবার, সোমবার কেশবপুর ও বুধবার মিরপুর গরু বাজারে কোরবানীর গরুর হাট বসবে। এছাড়াও প্রত্যেক বাজারে ঈদের আগের দিন সারারাত গরু বিক্রি করা হবে।