শায়েস্তানগরে হকার্স মার্কেট ভেঙ্গে পুকুর করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শহরবাসী

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভার সকল পুকুরকে সংস্কার করে নান্দনিক পুকুর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের পরামর্শে সাড়া দিয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান মিজান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেয়র মিজান জেলা প্রশাসককে আশ^স্ত করেন যে, হবিগঞ্জ শহরের বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর, মাস্টার কোয়ার্টার এলাকার পুকুরসহ পৌরসভার বিভিন্ন পুকুর সংস্কার করে নান্দনিক পুকুর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও শহরে পৌরসভার মালিকানাধীন গোপীনাথপুর পুকুরসহ যেসব পুকুর অবৈধ দখলের কবলে রয়েছে সেগুলোকে উদ্ধার করা হবে। পুকুরগুলোতে অত্যাধুনিক মেশিন দ্বারা মাটি উত্তোলন করে সংস্কার করা হবে এবং পুকুরের পাড়গুলোকে অনেকটা লেক আকারে তৈরি করা হবে। সেখানে ফুলের গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি লাগানো হবে। এসব পুকুর সংস্কার করা হলে শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে।
গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ ও মেয়র মিজানুর রহমান শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে করণীয় নির্ধারণ করতে শহরের জলমগ্ন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক ও মেয়র হবিগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতার কয়েকটি স্থান চিহ্নিত করেন। কিভাবে সেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, সে বিষয়গুলো নিশ্চিত হন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়র মিজানকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মেয়র মিজান।
সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে শহরের শায়েস্তানগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্মুখভাগ ও নজির মার্কেটের সম্মুখভাগের মাঝখানে থাকা হকার্স মার্কেট ভেঙ্গে পুকুর করা হবে।
উল্লেখ্য, গোপীনাথপুরের পুকুরটি উদ্ধারের জন্য স্থানীয় যুবকগণ ও পরিবেশ কর্মীরা মানববন্ধন প্রতিবাদ সভা, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এ প্রেক্ষিতে পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ পুকুরটিতে পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করেন। এ অভিযানের সময় পাড়ের ময়লা, আবর্জনা পরিস্কার করা হয়। এ সময় দখলকারীদের দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও পুকুরটি এখনও দখল মুক্ত করা যায়নি। সর্বশেষ মেয়র মিজান শহরের পৌরসভার মালিকানাধীন পুকুরগুলো উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিলে পরিবেশ কর্মীসহ সুশীল সমাজের মধ্যে সন্তোষ ফিরে আসে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, আমরা শহরের পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করার জন্য আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু নদীটি এখনও দখলমুক্ত হয়নি। ইদানিং প্রশাসন নদী দখলমুক্ত করণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে নদীটি অবশ্যই উদ্ধার করতে হবে। এছাড়া পৌরসভার মালিকানাধীন ও সরকারি পুকুরগুলো উদ্ধারের জন্য আন্দোলন করে আসছি। আন্দোলন করে জজ কোর্টের পুকুর রক্ষা করেছি। আন্দোলন করে পুরান মুন্সেফী ও নায়েবের পুকুর দখলমুক্ত করেছি। নায়েবের পুকুর পাড়ের পরিবেশ অনেকটা সুন্দর হলেও আস্তে আস্তে সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ পুকুরটি রক্ষার জন্য এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। নজির মার্কেট এলাকায় বর্তমানে হকার্স মার্কেট সেখানেও পুকুর ছিল। কিন্তু ওই পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে। ইদানিং পৌর কর্তৃপক্ষ পুকুর ও জেলা প্রশাসন সেখানে নান্দনিক পুকুর তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের বক্তব্য শহরের পরিবেশ রক্ষা করতে হলে পুকুরসহ জলাশয়গুলো রক্ষা করতে হবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, পরিচ্ছন্ন হবিগঞ্জ শহর গড়তেই বিকেজেসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর, মাস্টার কোয়ার্টারের পুকুরসহ পৌরসভার সকল পুকুরগুলোকে সংস্কার করে নান্দনিক পুকুর তৈরি করা হবে। সকলের সহযোগিতা নিয়ে হবিগঞ্জ শহরকে একটি বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।