স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচং উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের চকবাজার আশ্রয়ন প্রকল্পের নিকটবর্তী ১০৯নং দাগের সরকারি চারটি ডোবা গোপনে লীজ দিয়ে সেই লীজের টাকা পকেটস্থ করেছেন উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান। তিনি ওই এলাকার মাছ বিক্রেতা ঝাড়– মিয়া ও তবারক মিয়ার কাছে গত চৈত্র মাস থেকে আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত এক বছর মেয়াদি প্রায় ২০ হাজার টাকা বিনিময়ে ডোবাগুলো তাদেরকে লীজ দেন। এই লীজ নেয়ার কথা স্বীকার করে তারা জানান লীজ নেয়ার সময় চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান আমাদেরকে কোনো ধরণের কাগজপত্র দেননি। শুধু মুখের উপরে আমরা লীজ নিয়ে উক্ত জায়গায় মাছ চাষ করে আসছি। উপজেলা ভূমি অফিসকে না জানিয়ে এক কথায় চুপিসারে মেম্বার সাইদুরকে সাথে নিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করছেন চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান।
অভিযোগে জানা যায়, চকবাজার সংলগ্ন আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য পার্শ্ববর্তী চারটি ডোবা থেকে সরকারি খরচে মাটি উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনকৃত ডোবাগুলোতে মাছ ফেলানোর জন্য চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকদের কাছে বিগত দুই বছর যাবত লীজ প্রদান করে আসছেন। এই লীজের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে তিনিসহ তার সহযোগী মেম্বার সাইদুর টাকাগুলো আত্মসাত করেন। সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, চারটি ডোবার মধ্যে অন্য দুই ডোবা বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে মোজাহিদ, হাছন আলী নামের দুই ব্যক্তির কাছে লীজ প্রদান করেছেন। এই লীজের বিষয়টি তিনি শুধুমাত্র মৌখিকভাবেই দিয়ে থাকেন কোনো কাগজপত্র ছাড়াই। কিছুদিন পূর্বে ৩নং ভূমি অফিসের তহশিলদার কুতুব উদ্দিন ওই এলাকায় গিয়ে ডোবাগুলোতে মাছ না ফেলার জন্য চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীকে বলে আসেন। কিন্তু এসবে কর্ণপাত করেননি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান। অন্যদিকে ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সরকারি গোদামের পাশের জমি প্রতিবছরই সবজি ও মাছ চাষের জন্য চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লীজ দেন। গোদামের এই জমি এবছর মুরাদপুরের কিতাব আলী লীজ নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এইসব লীজের টাকা তিনি সরকারের কোন খাতে জমা দেন বা খরচ করেন তা জানা যায়নি। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি কিভাবে সরকারের জায়গা লীজ দেন তাও প্রশ্ন থেকে যায়।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি সরকারের কোনো জায়গা লীজ দেইনি। কেউ লীজের কাগজপত্র দেখাতে পারবে না। আর লীজ দেয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নেই।
বানিয়াচং ৩নং ভূমি অফিসের তহশিলদার কুতুব উদ্দিন জানান, আমিসহ আমার অফিসের লোক সেখানে গিয়ে তাদেরকে বারণ করে এসেছি কেউ যেন এই ভূমিতে মাছ চাষ না করে। আর সরকারি কোনো জায়গা লীজ দেয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যান সাহেবের নেই। সরকারি ভূমির মালিক হলেন জেলা প্রশাসক, ইউএনও আর এসিল্যান্ড। পতিত ভূমি কাকে লীজ দেবেন এটা তাঁদের ব্যাপার।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি জানান, কে লীজ দিলো কারা লীজ নিলো এই বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি বিস্তারিত জেনে জানাবো।
এই বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুন খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তহশিলদার আমাকে এখনো বিষয়টি জানায়নি। তবে আমি জানতে পেরেছি। সরকারি জায়গা লীজ দেয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যান সাহেবের নেই। তারপরও যদি তিনি দিয়ে থাকেন ওই লীজের টাকা ফেরত এনে সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। আর বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।