ফ্যামেলি আনিনি, এসেছি তিনটি সুটকেস নিয়ে। জনগণের স্বার্থে কাজ করব, তদবির শুনব না ॥ ভাল কাজ করতে গিয়ে বিদায় নিতে হলে চলে যাব ॥ সুতাং নদীর পানি বিশুদ্ধ ও দুষণমুক্ত হবিগঞ্জ গড়তে কাজ করব ॥ জেলা প্রশাসনে কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কারো কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নেয়া হবে না

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ॥ হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন- জনগণের স্বার্থে কাজ করব। কোন তদবির শোনার জন্য এখানে আসেনি। তদবির গ্রহণযোগ্য নয়। সোজা পথে হাঁটব। সামনে-পেছনে তাকাব না। আমি আমার পরিবার নিয়ে আসিনি। এসেছি ৩টি সুটকেস নিয়ে। তন্মধ্যে একটিতে ল্যাপটপ আর অন্যটিতে কাপড়-চোপর। ভাল কাজ করতে গিয়ে যদি বিদায় নিতে হয়, তাহলে চলে যাব। তবুও জনগণের স্বার্থে হবিগঞ্জকে একটি দুষণমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সুতাং নদীর পানির বর্জ্য পদার্থে সাধারণ মানুষ, জলজ প্রাণীর কোন ক্ষতি হউক তা কাম্য নয়। আমি চাই শিল্প যেমন বেঁচে থাকবে, শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন এই হবিগঞ্জে গড়ে উঠবে, মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নত হবে, তেমনি শিল্প কারখানা ও ইটভাটা কর্তৃক দুষিত বর্জ্য পদার্থের কবল থেকে জনগণ মুক্তি পাবে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, আগের মতো সুতাং নদীর বিশুদ্ধ পানিতে মাছ আসবে-বড় হবে, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বেলশ্বরী তীর্থ স্থানটি মনের মতো ব্যবহার করতে পারবে। এজন্য শিল্প কারখানাগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আমি সরেজমিন বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এরিয়া ও সুতাং নদীর বাস্তব পরিস্থিতি দেখেছি। হতবাক আমি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট শায়েস্তাগঞ্জ অলিপুর এলাকায় গড়ে উঠা মার নামে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পদার্থের গন্ধে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাই মার নামক এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও যতœবান হয়ে তাদের পরিবেশ আইন মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান শতভাগ ইটিপি ব্যবহার না করে রাতের আধারে নদী বা খালে বর্জ্য পদার্থ ফেলে পরিবেশ দূষণ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। এতে কারো তদবির আসলে তা মানা হবে না। সংশ্লিষ্ট কারখানার প্রতিনিধিগণকে প্রতিনিয়ত ইটিপি ব্যবহার করার পাশাপাশি এখন থেকে যেন কোন বর্জ্য পদার্থ সুতাং নদীতে না ফেলা না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। যদি কেউ বর্জ্য পদার্থ ফেলা অব্যাহত রাখেন, তাহলে জনস্বার্থেই আইন প্রয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কারো তদবির গ্রহণযোগ্য হবে না।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমি জিরো টলারেন্স নীতিতে চলব। এতে যদি আমার অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যেতে হয়, তাহলে প্রস্তুত রয়েছি। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে শিল্প কারখানার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসক আরো বলেন- জেলা প্রশাসনে কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কারো কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নেয়া হবে না। কারো স্পন্সরে কোন অনুষ্ঠান বা স্থাপনা করা হবে না। সরকার থেকে জেলা প্রশাসনকে যে টাকা দেয়া হবে তা দিয়েই অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মর্জিনা আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক উপসচিব মোঃ নুরুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক ইশরাত জাহান পান্না, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ তালুকদার ইকবাল, শায়েস্তাগঞ্জের ইউএনও সুমি আক্তার, লাখাই’র ইউএনও শাহিনা আক্তার, সদরের এসিল্যান্ড মাসুদ রানা, দৈনিক জনকন্ঠের হবিগঞ্জ সংবাদদাতা রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, প্রাণ-আরএফএল, স্কয়ার, বাদশা গ্রুপ, আরএকে সিরামিক সহ সকল শিল্পকারখানার প্রতিনিধি, ইউপি চেয়ারম্যান ও শহরের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। সভায় হবিগঞ্জের অলিপুর সহ এর আশপাশে গড়ে উঠা এক শ্রেণীর শিল্পকারখানা ইটিপি ব্যবহার না করে বরং তাদের কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য পদার্থ ও দুষিত পানি সরাসরি সুতাং নদীতে ফেলে দিয়ে বছরের পর বছর এই নদীর পানি দূষিত করা এবং সাধারণ মানুষ সহ হাঁস, মোরগ, গরু-ছাগলকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। কৃষি কাজ ব্যাহত ও ফসল উৎপাদনে বিঘœ ঘটায় উষ্মা প্রকাশ করেন জনপ্রতিনিধি সহ লাখাই উপজেলাধীন করাব গ্রামের সুতাং পাড়ের বাসিন্দা সাংবাদিক রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন।