বাহুবল ও মাধবপুরে শীতকালীন সবজি সীমের বাম্পার ফলন

কৃষকরা জমিতে ধানের চাষ না করে সীমের চাষ করেছেন

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জে শীতকালীন সবজি সীমের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্য সবজির তুলনায় কম পুঁজিতে বেশি লাভের কারণে ইদানিং সীম চাষে ঝুঁকছেন এ জেলার চাষীরা। গত বছরের তুলনায় ফলন ও দাম দুটোই ভালো হওয়ায় বেজায় খুশি কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা না পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার হবিগঞ্জ জেলায় ১৩ হাজার ৮৬ হেক্টর জমিতে সীম চাষ হয়েছে। ধানী জমিগুলোতে আমন চাষ না করে সেই জমিগুলোতে জেলার মাধবপুর ও বাহুবলের বেশিরভাগ কৃষক চাষ করেছেন শীতকালীন সবজি সীম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সীমের ফলনও হয়েছে ভালো। শুরুতে প্রতি কেজি সীম ১০০/১২০ টাকায় দামে বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতি কেজি সীম কৃষকরা পাইকারী ৫০/৬০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় সীম চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। ধান চাষের চেয়ে সীম চাষে বেশি লাভবান হচ্ছে কৃষক। এখানকার উৎপাদিত সীম জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে অনেক কৃষক জানিয়েছেন তারা কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা না পাওয়ার তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ঢাকা সিলেট-মহাসড়কের বাহুবল এলাকায় দিয়ে গেলে দেখা যায় সীম চাষের জমি। ধান চাষ করে লাভ না হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন সীম চাষের প্রতি ঝুকছেন। বাহুবল উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের হাওরে গিয়ে অসংখ্য সীম চাষের জমি দেখা গেছে। এ গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় গ্রামের কৃষকগণ মূলত ধান চাষ করতেন। কিন্তু বাজারে ধানের মূল্য না থাকার কারণে ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছে। বরং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন বর্তমান বাজারে ধানের মূল্য সাড়ে ৪ থেকে ৪৮০ টাকা। আর প্রতি মণ সীমের মূল্য বর্তমান বাজারে প্রাইকারী ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে কৃষকরা চলতি মওসুমে জমিতে আমন ধান চাষ না করে সীমের চাষ করেছেন। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা কৃষি বিভাগের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে কল্যাণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, তিনি এবার সাড়ে ৪ কের জমিতে সীমের চাষ করেছেন। প্রতি কের জমিতে খরচ হয়ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বিক্রি আসবে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরণে পরামর্শ কিংবা সরকারি ঔষধ পাচ্ছেন না। ভাল ঔষধ না পাওয়ায় সীম গাছের পাতাগুলো মরে যাচ্ছে। এতে গাছের ক্ষতি হচ্ছে। গাছের পাতা মরে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন আমাদের পরিচর্যা করতে হচ্ছে। বলেন, প্রয়োজনীয় ঔষধ পেলে হয়তো গাছের পাতাগুলো মরতো না। এতে আমরা আরো ভালবান হতাম। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি হলো সরকারি ভাবে ঔষধ ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার। কৃষকদের ঔষধ ও প্রশিক্ষণ দিলে আরো ভালো ভাবেও উন্নত প্রযুক্তিতে সীম চাষ করতে পারবেন। কৃষক মুক্তার আলী জানান, তার অনেক জমি রয়েছে। সেগুলো বর্গা নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা সীম চাষ করেছেন। তিনিও ২ কের জমিতে সীম চাষ করেছেন। গত বছর এলাকার কৃষক যথা সময়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ না পাওয়ার কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ বিদেশ চলে গেছেন। আবার কেউ অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। যারা লাভবান হয়েছেন এবার তারাই সীমের চাষ করেছেন। এবার সীমের ভাল ফলন হয়েছে। বাজারে সীমের মূল্য যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা সময় মতো ঔষধ না পাওয়ার কারণে সীম গাছে পাতাগুলো মরে যাওয়সহ গাছের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষকগণ প্রতিদিন গাছে পরিচর্যা করেও কোন লাভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, কৃষকরা যদি সময়মত জমিতে ঔষধ প্রয়োগ করতে পারতেন তাহলে গাছের পাতা মরতো না। এছাড়াও এলাকার কৃষকদের এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই। তাই তিনি কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ যথাসময়ে ঔষধের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সীমের উৎপাদন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান। তিনি বলেন তুলনামূলকভাবে ধান চাষের চেয়ে সীম চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর চাষের চাহিদা বাড়ছে। উৎপাদিত সীম জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে লাভবান হচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরাও। তাদের হিসেবে এক মৌসুমে এখানে ১৫ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন সীমের উৎপাদন হবে। এতে প্রায় ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা উপার্জিত হবে। তিনি বলেন, সীমে প্রোটিন রয়েছে। সীম খেতেও সুস্বাদু সবজি। তাই তিনি সীম চাষ করার জন্য পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমান ধান চাষের চেয়ে সীম চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা সীম চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।