মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জে ভাইরাস জনিত চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আবার অনেকে সুস্থ হলেও ঘটেছে বিপত্তি। ভাইরাস সংক্রমণের কারণে তাদের চোখের কর্নিয়ায় স্পট বা সাদা দাগ পড়ে গেছে। ফলে তারা সঠিকভাবে দেখতে পারছেন না। একই জিনিস তারা একাধিক অথবা চোখে ঝাপসা দেখেছেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার বলেন, হঠাৎ একদিন তিনি দেখতে পান তার ১ বছর বয়সী শিশুর চোখ লাল। সাথে সাথে তিনি তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দেন। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তিনি ওষুধ ব্যবহার করতে থাকেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হয়ে আরো অবনতি হয়। পুনরায় তাকে আবারো ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন এলার্জির জন্য এমন হয়েছে। তিনি এলার্জির ওষুধ লিখে দেন এবং পাশাপাশি পূর্বের দেয়া ড্রপ ব্যবহার করতে বলেন। কিন্তু তার পরও চোখের কোন উন্নতি হয়নি বরং এক পর্যায়ে তার চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ ও হলুদ রঙের পুঁজ বের হতে থাকে এবং চোখটি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি ভেঙ্গে পড়েন। দ্রুত তাকে হবিগঞ্জের একজন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার চোখের অবস্থা দেখে দ্রুত তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হবিগঞ্জ শহরের চিড়াখানা রোড, শায়েস্তানগর আবাসিক এলাকার আখতার মেডিকেলে। ওই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক (অবঃ) ডাঃ মোঃ আখতার উদ্দিন মুরাদ তাকে দেখে বলেন, চোখে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। এটি ভাল হতে ১০/১৫ দিন লাগতে পারে। এমনকি পুরোপুরি ভাল হতে ১ মাসও লেগে যেতে পারে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ হলে চিকিৎসা গ্রহণ অবস্থায়ও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নেই। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রতিবার ওষুধ ব্যবহারের পর হাত ভাল করে ধুতে হবে। তবে বাসার অন্যান্যরাও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল। এক পর্যায়ে তার শিশু সন্তানের চোখ ওয়াশ করাতে হয়। প্রায় ১৫ দিন পর থেকে তার শিশু সন্তানের চোখ ভাল হতে শুরুর করলেও তিনি তার দুই বোনসহ বাসার সকলেই একই সাথে চোখে ভাইরাস আক্রান্ত হন। পরে তারাও ডাঃ আখতার উদ্দিন মুরাদের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসা গ্রহণ শেষে তারা ভাল হলেও তার কর্ণিয়ায় স্পট বা সাদা দাগ দেখা দেয়। বর্তমানেও তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ডাঃ মোঃ আখতার উদ্দিন মুরাদ বলেন, চোখ উঠা একটি ভাইরাসজনিত ইনফেকশন এবং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। কনজাংটিভা নামে চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা রোগ বলা হয়। ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালার্জির কারণেও চোখ ওঠে। সাধারণভাবে চোখ ওঠা বলতে চোখ লাল হওয়া বুঝানো হলেও কিন্তু চোখ লাল হওয়া একটি উপসর্গ মাত্র। চোখ ওঠা রোগীর চোখের দিকে তাকালে কারও চোখ ওঠে না। যদিও ভাইরাসে আক্রান্ত চোখ কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় কিন্তু অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে আশপাশের অনেককেই আক্রান্ত করতে পারে। এ ধরনের রোগী কতদিনে সুস্থ হবে সেটা নির্ভর করে, তিনি কি ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত এবং তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপর। চোখ সাধারণত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, এডিনো ভাইরাস, স্কেলেরার ইনফেকশন, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ইউভিয়াল টিস্যু ইনফেকশন ইত্যাদি নানা কারণে চোখ লাল হতে পারে। ভাইরাস কেরাটাইটিস অথবা হারপেম সিমপ্লেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশনই মুলত ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। সাধারণত এ ধরনের ইনফেকশনে এক চোখ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে চোখের চারপাশে হালকা লাল রং, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখের ভেতর অস্বস্থি, রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হয়, চোখ থেকে অতিমাত্রায় পানি পড়ে, শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হওয়া ও হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি হয়, ঘুম থেকে উঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে। সাধারণত ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে উপসর্গসমূহ কমতে থাকে। কিন্তু দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় এবং কর্নিয়াতে সাদা দাগ পড়ে যা খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না।
চোখ উঠা অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে একটি রোগ। চোখে প্রদাহ হলে অশ্রুতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায় এবং অশ্রু মোছার সময় রোগের জীবাণু আমাদের হাতে চলে আসে। এর পর সেই হাত দিয়ে আমরা যা কিছুই স্পর্শ করি সেখানে ভাইরাস চলে যায়। এভাবে কারও সঙ্গে করমর্দন, তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মুঠোফোন ইত্যাদি মাধ্যমে রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই বাসায় অবস্থান করতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বাহিরে যাওয়া উচিত নয়। পরিস্কার কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা ময়লা পরিস্কার করতে হবে এবং যতটা সম্ভব ওই কাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। অন্য চোখেও যাতে এ রোগ না হয়, সেজন্য যতটা সম্ভব ভালো চোখে হাত না দেওয়াটা মঙ্গলজনক। তবে সাধারণত এ রোগে একই সাথে অথবা পর্যায়ক্রমে দুই চোখই আক্রান্ত হয়। যে পাশের চোখ উঠবে, সে পাশেই কাত হয়ে শুতে হবে। না হলে আক্রান্ত চোখ থেকে অন্য চোখেও সংক্রমণ হতে পারে। চোখে বারবার পানি দিয়ে পরিস্কার করা বা চোখে পানির ঝাপটা দেয়া যাবে না। এতে যদি ভালো না হয় বা যদি চোখে কোন জটিলতা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনে নিচের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। ডাঃ মোঃ আখতার উদ্দিন মুরাদ, ০১৭৯৬৪৮২২০৪, ০১৭০৮৫৭২৪৭৮।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com