এসএম সুরুজ আলী ॥ বর্বরোচিত জঙ্গী হামলায় নিহত সিনিয়র সহকারি জজ জগন্নাথ পাঁড়ে ও শহীদ সোহেল আহমদের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন হবিগঞ্জ এর উদ্যোগে জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ জিয়াউল হক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোঃ আলিম উল্ল্যাহ, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া কামাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরু মিয়া বদরু। সভা পরিচালনা করেন নাজির জাহাঙ্গীর আলম।
সভায় বক্তারা বলেন, ইসলাম ধর্মে কোনো শ্রেণি বিভাগ নেই। অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু জঙ্গিবাদের কাজ হলো অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো। ধার্মিকরা কখনও হিংস্র হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিই সেদিন বিচারকদের উপর হামলা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করছেন। অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে নিহত বিচারকদের পরিবারকে প্রতিবছর সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বক্তারা আরো বলেন, জঙ্গিবাদ শুরু হয় বিচার বিভাগকে আঘাত করার মাধ্যমে। যারা জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়, জঙ্গিবাদকে ধারণ ও লালন করে তাদের প্রতিহত করতে হবে। বক্তারা বলেন, আমরা দু’জন বিচারককে অকালে হারিয়েছি। কিন্তু হাজারো বিচারক সারা দেশে কাজ করছেন। যতদিন বাংলাদেশের মানচিত্র থাকবে ততদিন জজ জগন্নাথ পাঁড়ে ও শহীদ সোহেল আহমদ আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। সভা শেষে তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন কোর্ট মসজিদের খতিব মাওলানা গোলাম মোস্তফা নবীনগরী।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে ঝালকাঠিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবির) বোমা হামলায় জগন্নাথ ও সোহেল নিহত হন। ২০০৬ সালের ২৯ মে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকলে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ পলাতক আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফ ব্যতীত দেশের বিভিন্ন আদালতে শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল এ মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হায়দার হুসাইনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৮তম বিসিএস ক্যাডারে ১৯৯৮ সালের ২৪ জুন জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমদ সহকারী জজ হিসেবে যোগ দেন। জগন্নাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।