সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষের সহজাত অভ্যাস হলো সুন্দর, আনন্দদায়ক, কল্যাণকর কোন কিছুর প্রাপ্তিতে আনন্দিত হওয়া। মানুষ যখনই কোন অকল্যাণ, অন্যায়, অত্যাচার, জোর-জুলুম, নির্যাতন ও নিপীড়নের যাতাকল থেকে মুক্তি পেয়েছে, তখনই স্বধর্মীয় ও স্বগোত্রীয় লোকদের নিয়ে করেছে আনন্দ অনুষ্ঠান। আর এ আনন্দকেই আরবীতে বলা হয় ঈদ। পারিভাসিক অর্থে ঈদ হলো কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি বা কল্যাণকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়া এবং স্মৃতিচারণ করা। কোন কোন অভিধান বেত্তাদের মতে- ঈদকে এজন্যই ঈদ বলা হয়, কারণ বিশেষ দিনটি প্রতি বছর বিশেষ আনন্দের বার্তা নিয়ে ফিরে আসে। আর ‘মিলাদ’ শব্দের অর্থ জন্ম, জন্মস্থান, জন্ম পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিশেষ ঘটনাবলী।
সমষ্টিগতভাবে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)’ এর অর্থ হলো রাসুল (সঃ) এর আগমনে আনন্দিত হওয়া ও বিশেষ এই দিনের স্মৃতিচারণ করা।
কোন নেয়ামত বা কল্যাণ প্রাপ্তিতে আনন্দোৎসব করা যেমন মানুষের সহজাত অভ্যাস তেমনি আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশও তাই। কোরআনুল কারীমের সূরা ইউনুসের ৫৮নং আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে তারা আনন্দিত হোক। উক্ত আয়াতে ‘রহমত’ বা অনুগ্রহ শব্দের ব্যাখ্যায় আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (রহঃ) তাফসীরে দুররুল মানসুরে- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাছ (রাঃ) এর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন- রহমত দ্বারা এখানে মুহাম্মদ (সঃ) কে বুঝানো হয়েছে। এতে বুঝা গেল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আগমনে এবং আমরা তাঁকে নবী হিসেবে প্রাপ্তিতে আনন্দিত হওয়া আল্লাহর নির্দেশ। আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) তার রচিত গ্রন্থ ‘মা সাবাতা মিনাস্ সুন্নাহ্’ তে লিখেছেন হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রজনী লাইলাতুল ক্বদর, ফজীলতের রজনী শবে বরাত, শবে মেরাজ, ঈদের রাত সবই আল্লাহ্ তা’আলা হাদিয়া করেছেন রাহমাতুল্লিল আলামীনকে। যাঁকে দান করা রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, স্বয়ং তাঁর আগমন দিবস যে ঐ রাতের চেয়ে কত লক্ষ কোটি গুণ বেশি ফজীলতপূর্ণ তা একমাত্র আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ণিত একটি হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) তার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থের ৯ম খন্ডের ১১৮ পৃঃ ও আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) তাঁর রচিত ‘আইনী’ গ্রন্থের ২০/২৫ তে লিখেন- হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন- আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর স্বপ্নে দেখলাম যে সে (আবু লাহাব) অত্যন্ত দূরাবস্থার মধ্যে আছে। আবু লাহাব বলল তোমাদের কাছ থেকে আসার পর আযাব ছাড়া কিছুই পাইনি। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব কিছুটা লাঘব করা হয়। হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন- এই লাঘবের কারণ হলো- সোমবারে সে মুহাম্মদ (সঃ) এর আগমনের সংবাদ পেয়ে খুশিতে তার দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করেছিল। ঈমান না আনার পরও নবীজির (সঃ) আগমনে খুশি হওয়াতে যদি আবু লাহাব সামান্য পুরস্কৃত হয় তাহলে ঈমানদার যদি নবীর (সঃ) আগমনে আনন্দিত হয় আল্লাহ্ তাকে বিশেষ পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com