মুফতি আলমগীর হোসাইন সাইফি
বছর ঘুরে আবারো এল পবিত্র মাস রবিউল আউয়াল। যেই মাসে অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে শান্তির আলোকবর্তিকা হয়ে আগমন করেন সৃষ্টিকূলের মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। আজ থেকে প্রায় ১৪৪৯ বছর আগে মক্কার সম্ভ্রান্ত কোরাইশ বংশে হযরত মা আমিনা (রাঃ) এর কোলে আগমন করেন দয়াল নবীজি (সঃ)। তাঁর আগমনে পুলকিত হয় সারা জাহান। ফেরেস্তাগণ করেন আনন্দ মিছিল। গোটা দুনিয়ায় বইতে শুরু করে শান্তির রিমঝিম সুবাতাস। অন্যায়, অত্যাচার, জোর-জুলুম আর নির্যাতনের বেজে উঠে বিদায় ঘন্টা। ধ্বসে পড়ে তৎকালীন অন্যায়ের মূর্ত প্রতীক রোম ও পারস্য স¤্রাটদের রাজপ্রাসাদ। হেদায়াতের আলো যেন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দুনিয়ার দিকদিগন্তে। পৃথিবী সৃষ্টির পর সর্বোচ্চ কল্যাণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ, যা দুনিয়াবাসীর জন্য সর্বোচ্চ নেয়ামত, এর চেয়ে বড় কোন নেয়ামত হতে পারে না। আর আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন- যখনই তোমরা আমার পক্ষ থেকে কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হও তখন তার শুকরিয়া স্বরূপ আনন্দ কর। এই আনন্দ হবে এবাদত ও শরীয়ত সম্মত পন্থায়। মুসলিম বিশ^ এই আনন্দ উদযাপনে ১২ই রবিউল আউয়ালে জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপন করে থাকে। নবীজি (সঃ)-এর আগমনে আনন্দিত হওয়াটা নতুন কিছু নয় বরং সেটা রাসুলে কারীম (সঃ) দুনিয়াতে আগমন করার পর থেকেই চলে আসছে। তিনি দুনিয়াতে আগমন করার পর থেকে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক তাঁর ফেরেস্তাদের নিয়ে তাঁর প্রিয় নবীর (সঃ) উপর ছালাতু ছালাম পাঠে মশগুল আছেন এবং কেয়ামততক থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা হাইছামী (রহঃ) এর যুগান্তকারী ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ নামক কিতাবে লিখেন- রাসুলে কারীম (সঃ) এর মা হযরত আমিনা (রাঃ) বলেন- আমার সন্তান হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আগমন উপলক্ষে দলে দলে ফেরেস্তাগণ খুশির সংবাদ নিয়ে আগমন করছিলেন। আমি তাকিয়ে দেখলাম বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে ফেরেস্তারা বিভিন্ন ভাষায় আমাকে খুশির বাণী শুনাচ্ছিলেন। আরো দেখলাম দলে দলে ফেরেস্তাগণ আমার ডানে বামে উড়াল দিচ্ছে আর সমবেত কন্ঠে ছালাতু ছালাম পাঠ করছে। তখন আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন হযরত জিব্রাইল (আঃ) কে ডেকে বলেন- আমার বন্ধুর আগমন উপলক্ষে সমস্ত রুহকে সারিবদ্ধ কর এবং শারাবান তাহুরা তাদের সামনে উপস্থাপন কর, হে রিদ্বওয়ান ফেরেস্তা জান্নাতের হুর গিলানকে নতুন সাজে সজ্জিত কর এবং চারিদিকে পবিত্র মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে দাও। তাই উম্মতে মুহাম্মদী (সঃ) আশেকে রাসুলের (সঃ) দল মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপন করে থাকে।