এসএম সুরুজ আলী ॥ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসব শেষ হবে ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে হবিগঞ্জের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দুর্গোৎসবকে আনন্দমুখর করে তুলতে এবার হবিগঞ্জে ৬৫৩টি সার্বজনীন পূজা মন্ডপে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার পূজামন্ডপগুলোতে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। পঞ্চমীতে মন্ডপে-মন্দিরে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। তবে রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লংকা যাত্রার আগে রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। শরৎকালে দেবীর পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়। সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিনে শুক্রবার ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ষষ্ঠীতিথিতে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। শনিবার মহাসপ্তমী, রবিবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, সোমবার মহানবমী এবং মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। শেষ দিনে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়ার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গোৎসব চলাকালে প্রতিদিনই সব মন্ডপে অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মন্ডপে মন্ডপে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়েছে। হবিগঞ্জের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার দিন মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় জানান, এ বছর হবিগঞ্জে ৬৫৩টি মন্ডপে সার্বজনীয় দূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পূজা মন্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, এবারের পূজায় তিন স্তরের নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে পুলিশের পাশাপাশি আয়োজক কমিটির স্বেচ্ছাসেবক ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করি সকলের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, কেউ যদি নাশকতার চেষ্টা করে তাহলে পুলিশ অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এদিকে গতকাল বিকেলে শহরের কয়েকটি পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে শেষ পর্যায়ে সাজসজ্জার কাজ করা হচ্ছে। আয়োজকরা দাবি করেন পূজা চলাকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ব্যবস্থা ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারী থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হবিগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ভারতের বিভিন্ন মন্দিরের আদলে তৈরী করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার নায়েবের পুকুর পাড়স্থ চৌধুরী বাজার সার্বজনীন পূজা মন্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমন পাল জানান, তাদের পূজা মন্ডপটি ভারতের কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের আদলে তৈরী করা হয়েছে। এর মূর্তির উচ্চতা ৭০ ফুট। তিনি বলেন, মন্ডপের ডিজাইনের কাজ শেষ। এবার তাদের মন্ডপের ডিজাইনসহ অন্যান্য কাজে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে তাদের ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। তিনি আশাবাদী এবার তাদের পূজামন্ডপে সর্বোচ্চ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। তিনি পূজা মন্ডপ পরিদর্শনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।