পিবিআই’র হাতে গ্রেফতারের পর ঘাতক বিলালের স্বীকারোক্তি

এসএম সুরুজ আলী ॥ মাধবপুরের সুরমা গ্রামে আলোচিত শিবু সরকার হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বিল্লাল মিয়াকে (২২) ঢাকার গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃত বিল্লাল মিয়া সুরমা গ্রামের চেরাগ আলীর ছেলে। গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করলে হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক বিলাল। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার রাত ৪টার দিকে পিবিআই হবিগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরীর নির্দেশনায় ইন্সপেক্টর শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার মনিপুর নামক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে গ্রেফতারকৃত বিল্লাল মিয়াকে হাজির করা হয়। আদালতে বিলাল মিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পিবিআই’র ইন্সপেক্টর শাহজাহান সিরাজ জানান, স্বীকারোক্তিতে বিলাল জানিয়েছে, নিহত শিবু সরকার ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার শিপন মিয়ার মধ্যে হিসাব-নিকাশ নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে শিপন পরিকল্পনা করে শিবুকে সরিয়ে ফেললে সিএনজি অটোরিকশা মেরামতের দোকানটি তার একার হয়ে যাবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ৫ জুলাই বিলাল মিয়া, শিপন মিয়াসহ তাদের আরো ৪/৫ জন সহযোগী একত্রিত হয়ে শিবু সরকারকে রাতে বাগানে গিয়ে ভাড়া করা মেয়ে (পতিতা) নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার প্রস্তাব দেয়। ঘাতকরা ও শিবু সমবয়সী হওয়ায় তাদের প্ররোচনা বুঝতে না পেরে সে ঘাতকদের সাথে সুরমা-আন্দিউড়া রাস্তার ব্রীজে যায়। সেখানে কিছু সময় কাটানোর পর ঘাতকরা শিবুকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করার জন্য কাটেঙ্গা বিলের পাশের হাওরে নিয়ে কাদা মাটিতে শিবু’র লাশ পুঁতে রাখে। পরে ঘাতকরা ঠান্ডা মাথায় যার যার বাড়িতে চলে যায়। এ ঘটনার পরদিন শিবু সরকারের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুজি করে কোন সন্ধান পায়নি। এ প্রেক্ষিতে ৭ জুলাই শিবুর ভাই নিবু সরকার মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ৯ জুলাই হাওরে অজ্ঞাত মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। এ খবর পেয়ে শিবুর স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিবুর লাশ সনাক্ত করেন।
এ ব্যাপারে শিবুর ভাই নিবু বাদি হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য দিলিপ পালসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মাধবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশীষ কুমার মৈত্র মামলার এজাহার নামীয় ৪ আসামীকে ধরে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন ক্লু পাননি। পরবর্তীতে শিবুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ঢাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক যুবককে আটক করে তদন্ত কর্মকর্তা ব্যাপক জিজ্ঞসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর আলম জানায়, শিবুর ব্যবসায়িক পার্টনার শিপন ও জানে আলমের কাছ থেকে মোবাইলটি ৫শ’ টাকায় ক্রয় করেছে সে। তার দেয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ সুরমা গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে জানে আলম ও আনোয়ার মিয়ার ছেলে শিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে। পরবর্তীতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পিবিআই মামলাটি পুনরায় তদন্ত করা অবস্থায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ ঢাকার গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার মনিপুর এলাকা থেকে বিলাল মিয়াকে গ্রেফতার করে। সে ঘটনার পর থেকে পলাতক থেকে সেখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ করতো।
উল্লেখ্য, সুরমা গ্রামের নোয়াহাটির আরাধন সরকারের ছেলে শিবু সরকার (২৫) সিএনজি অটোরকশার কাজ করতেন। পরবর্তীতে একই গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে শিপন মিয়াকে (২৫) নিয়ে সে সিএনজি অটোরিকশা মেরামতের দোকান দেয়। দোকান দেওয়ার পর গত ৫ জুলাই শিবু সরকার নিখোঁজ হয়।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর ৭ জুলাই শিবু সরকারের ভাই নিবু সরকার মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। ৯ জুলাই কাটেঙ্গা বিল থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।