মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে দিশারী কেজি এন্ড হাই স্কুল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ সালে হবিগঞ্জ শহরের স্টাফ কোয়ার্টার সড়কে ভাড়া বাসায় যাত্রা শুরু করে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন হবিগঞ্জের অতি পরিচিত মুখ মিজানুর রহমান চৌধুরী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি তাঁর তত্ত্বাবধানেই স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ২০০৪ সালে স্টাফ কোয়ার্টার সড়কে ভাড়া বাসায় ‘ক্বিরাতিয়া ইসলামী একাডেমী’ নামে একটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করি। শুরু থেকেই আমি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। হাটি হাটি পা পা করে প্রতিষ্ঠানটি যখন একটি অবস্থানে নিয়ে যাই ঠিক তখনি ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে রাতের আঁধারে আমার প্রতিষ্ঠানটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি হতবিহব্বল হয়ে পড়ি। তিল তিল করে গড়ে তোলা আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমার স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। চারদিকে অন্ধকার দেখতে থাকি। এক পর্যায়ে গ্রামের বাড়িতে থাকা নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা এনে নতুন করে প্রতিষ্ঠানটি চালু করি। তখন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেই ‘দিশারী কেজি এন্ড হাই স্কুল’।
শুরুতেই স্কুলটিতে নার্সারী, কেজি ও প্রথম এ তিন শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়। প্রথম বছর নার্সারীতে ৪ জন, কেজি শ্রেণিতে ৫ জন এবং ক্লাস ওয়ানে ৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। আর তাদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় ৩ জন। পর্যায়ক্রমে শ্রেণি উন্নীত করা হয়। বর্তমানে স্কুলে নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হচ্ছে। আর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৩০ জন এবং তাদের পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন ১২ জন শিক্ষক।
স্কুলটিতে দুই শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রথম শিফটে নার্সারী, কেজি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শিফটে সকাল ১১টা ১৫ মিনিট থেকে ২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত তৃতীয় থেকে ৫ম শ্রেণির ক্লাস নেয়া হয়। প্রথম শিফটের অ্যাসেম্বলী সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে এবং দ্বিতীয় শিফটের অ্যাসেম্বলী অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১১টায়।
স্কুলের সাফল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাইমারী সমাপনীতে স্কুলের সাফল্য শতভাগ। প্রতি বছরই এ প্রতিষ্ঠানের ২/৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেয়ে থাকে। আর হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় ২০১৭ সালে এ প্রতিষ্ঠানের ৫১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করে ৩৯ জন। তন্মধ্যে ট্যালেন্টপুল ২৩টি। ২০১৮ সালে ৫৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করে ৪১ জন। তন্মধ্যে ট্যালেন্টপুল ২৫টি। ২০১৯ সালে ৬০ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করে ৪৭ জন। তন্মধ্যে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পায় ২১ জন।
সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় ২০১৯ সালে ২৫ জন অংশ নিয়ে পাশ করে ১১ জন এবং ২০২০ সালে ৩৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করে ১০ জন।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, শিশুরা নিষ্পাপ, ফুলের মতো সুন্দর। আজকের শিশু আগামীদিনের কর্ণধার। তিনি সব সময় চেষ্টা করেন প্রতিটি শিশুর মেধার বিকাশ ঘটাতে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে। যাতে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষিত হয়ে একদিন দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে। এজন্য স্কুলে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই পড়ানো হয়। মাসিক মডেল টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান নির্ণয় করা হয়। কৃতি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে পুরস্কৃত করা হয়। রয়েছে খেলাধুলা ও শিক্ষা ভ্রমণের ব্যবস্থা। ১ম সাময়িক, ২য় সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষা শেষে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষা বিষয়ক রিপোর্ট পেশ করা হয়। রিপোর্টের উপর প্রশ্ন, উত্তর ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। স্কুলটিতে সরকার নির্ধারিত পাঠ্যবই ছাড়াও শিশুর মেধার বিকাশে কম্পিউটার, সাধারণ জ্ঞান, চিত্রাংকন, সঙ্গীত, ওয়ার্ডবুক, ধর্ম শিক্ষা পড়ানো হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার রয়েছে চিত্রাংকন ও সঙ্গীতের বিশেষ ক্লাস।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী স্বপ্ন দেখেন বিদ্যালয়টিকে ভবিষ্যতে দশম শ্রেণিতে উন্নীত করা। গুণগত শিক্ষা প্রদান করে প্রতিটি শিশুকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
হবিগঞ্জের কিন্ডারগার্টেনগুলোর সাফল্যগাঁথা ১৪
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com