প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত পড়ার চাপ দেয়া হয় না ॥ অধ্যক্ষ অজিত কুমার পাল ভবিষ্যতে স্কুলটিকে একটি মানসম্পন্ন জুনিয়র স্কুলে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখেন
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে চাইল্ড হেভেন কেজি স্কুল। শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত পড়ার চাপ না দিয়ে সরকার নির্ধারিত পাঠ্যবই পড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। পাশাপাশি থাকে অন্যান্য যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রমও। ফলে দিন দিন প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠে। অভিভাবকরাও এ প্রতিষ্ঠানে নিজেদের সন্তানকে ভর্তি করে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন।
চাইল্ড হেভেন কেজি স্কুলের অধ্যক্ষ অজিত কুমার পাল বলেন, ২০০৫ সালে কয়েকজন সমমনা মিলে ‘আর্ড’ এনজিও’র মাধ্যমে শহরের ঘাটিয়া আবাসিক এলাকায় একটি স্কুল খোলেন। নাম দেন ‘চাইল্ড হেভেন কেজি স্কুল’। তিনি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এ স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। শুরুতেই নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম বছর ৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ওই সময় শিক্ষক ছিলেন ৮ জন। আর বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩শ’ এবং শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত করে রামকৃষ্ণ মিশন সংলগ্ন স্থানে নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন, স্কুলটি যে এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় তা মূলত হিন্দু প্রধান এলাকা। তাদের টাকা পয়সা কম এবং দুর্বল শ্রেণির। এ স্কুলে যে সকল শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের, দোকান কর্মচারিদের সন্তান। তাই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ মাসিক বেতনও কম। এমনকি অনেককে নামমাত্র বেতন বা বিনা বেতনেও পড়াতে হয়। ফলে প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অর্থনৈতিক দৈন্যতা লেগেই থাকে।
যে সব শ্রেণিতে ভর্তি ও শিক্ষাদান করা হয় ঃ নার্সারী, কেজি, প্রথম শ্রেণি (স্ট্যান্ডার্ট ওয়ান), দ্বিতীয় শ্রেণি (স্ট্যান্ডার্ট টু), তৃতীয় শ্রেণি (স্ট্যান্ডার্ট ত্রি), চতুর্থ শ্রেণি (স্ট্যান্ডার্ট ফোর), পঞ্চম শ্রেণি (স্ট্যান্ডার্ট ফাইভ)। ভর্তির বয়স ৪+ নার্সারী, ৫+ কেজি, ৬+ প্রথম, ৭+ দ্বিতীয়, ৮+ তৃতীয়, ৯+ চতুর্থ, ১০+ পঞ্চম শ্রেণি। সব শ্রেণিতে নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তি ফি ১ হাজার ৭শ’ টাকা আর পুরাতন ১ হাজার টাকা ২শ’। নার্সারী ও কেজি শ্রেণিতে মাসিক বেতন ৩শ’ টাকা, প্রথম হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক বেতন ৪শ’ টাকা। বেতন প্রতি মাসের ৫, ১০ ও ১৫ তারিখের মধ্যে অবশ্যই প্রদান করতে হয়। পরপর তিন মাস বেতন পরিশোধ না করলে ভর্তি বাতিল হয়ে যায়।
চাইল্ড হেভেন কেজি স্কুলে ইংরেজি, বাংলা, গণিত, ধর্মশিক্ষা, বিজ্ঞান, সমাজ, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি সঙ্গীত শিক্ষা, আবৃত্তি, চারু ও কারুকলা, খেলাধুলা ও শরীর চর্চা প্রশিক্ষণ, বাংলা ও ইংরেজি বলার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শিশুদের মানসিক বিকাশ ও জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে শিক্ষা সফর ও বনভোজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের মননশীলতা বিকাশে প্রকাশনা, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। জাতীয় সকল দিবসে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বার্ষিক মিলাদ ও সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদেরকে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কোন ছাত্রছাত্রী পিছিয়ে থাকলে বিশেষ কোচিংয়ের মাধ্যমে তাকে শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে। তিনটি সেমিস্টার পরীক্ষার মাধ্যমে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল নির্ণয় করা হয়।
বিদ্যালয়ের সময়সূচি ঃ মর্নিং শিফ্ট- নার্সারী, কেজি ও প্রথম শ্রেণি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা। ডে শিফ্ট- ২য় শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে ক্লাস শুরুর ১০ মিনিট পূর্বে স্কুলে উপস্থিত থেকে অ্যাসেম্বলীতে অংশ নিতে হয়। ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট পর ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।
পরীক্ষার সময় ঃ ১ম সাময়িক/সেমিস্টার পরীক্ষা মার্চ মাসের ৪র্থ সপ্তাহে, ২য় সাময়িক/সেমিস্টার জুন মাসের ৪র্থ সপ্তাহে এবং বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি/বেতন মওকুফ। একই পরিবারের দুইজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের বেতন অর্ধেক রাখা হয়।
সাফল্য ঃ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে আসছে। কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষা এবং বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক বৃত্তি পেয়ে থাকে। তাছাড়া হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। আর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই শতভাগ পাশসহ বৃত্তি পেয়ে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করছে।
স্কুলের অধ্যক্ষ অজিত কুমার পাল ভবিষ্যতে স্কুলটিকে একটি মানসম্পন্ন জুনিয়র স্কুলে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখেন। এজন্য তিনি হবিগঞ্জবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।