হবিগঞ্জের কিন্ডারগার্টেনগুলোর সাফল্যগাঁথা (আট)

কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদেরকে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আধুনিকতা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হবিগঞ্জ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ। ২০০৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। তবুও থেমে থাকেনি তাদের পথচলা। প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রিন্সিপাল এ প্রতিষ্ঠানটিকে হবিগঞ্জের একটি সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।
আলাপকালে হবিগঞ্জ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রিন্সিপাল কাজী মহসিন আহমদ বলেন, ২০০৬ সালে হবিগঞ্জ শহরের পুরানমুন্সেফি আবাসিক এলাকায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি। হাটি হাটি পা পা করে প্রতিষ্ঠানটি সাফল্যের ১৪তম বর্ষে পদার্পন করবে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নার্সারী থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। ওই সময়ে ৬৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পথচলা শুরু হয়। যাতে আবাসিক সুবিধাও রাখা হয় এবং অদ্যাবধি তা চলমান রয়েছে। আমরা কয়েকজন সমমনা লোক একত্রিত হয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ি। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন সরকারি বৃন্দাবন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মর্তুজা মিয়া।
হবিগঞ্জ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সাফল্য ঃ প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রিন্সিপাল কাজী মহসিন আহমদ বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) ও ৮ম শ্রেণির সমাপনী (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ধারাবাহিক শতভাগ সাফল্য অর্জন করে আসছে। পিএসসিতে এ পর্যন্ত পৌণে ২ শতাধিক এবং জেএসসিতে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাশ করেছে। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ এবং সরকারি বৃত্তিও রয়েছে। এছাড়া এসএসসিতে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাফল্য শতকরা ৯৭ ভাগ। বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছে।
প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য ঃ প্রতিষ্ঠানটি সার্বক্ষণিক সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রয়েছে নিরিবিলি একাডেমিক ব্যবস্থা। জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়নের জন্য সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাক ও পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে স্কুলে আসতে হয়। মোট কার্যদিবসের ৮০ ভাগ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় না। এ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।
ভর্তি প্রক্রিয়া ঃ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ১৫ নভেম্বর থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ১০০ টাকায় প্রতিষ্ঠানের অফিসকক্ষ থেকে ভর্তি ফরম বিক্রি করা হয়। পুরাতন ছাত্রছাত্রীগণ শুধু সেশন ফি ও অন্যান্য ফি দিয়ে উত্তীর্ণ সাপেক্ষে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। ক্লাস শুরু পহেলা জানুয়ারি থেকে।
বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় সরকারি স্কুলের বিকল্প মানসম্পন্ন স্কুল রয়েছে। কিন্তু হবিগঞ্জে তা নেই। তাই কাজী মহসিন আহমদ স্বপ্ন দেখেন হবিগঞ্জে ‘হবিগঞ্জ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ’ হবে মানসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান। হবিগঞ্জের মানুষ নির্ধারিত দুইটি সরকারি স্কুলে নিজের সন্তানকে ভর্তি করানোর পেছনে না ছুটে এখানে এনে ভর্তি করাবেন। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রিক। এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে অনেকে ব্যবসা খুলে বসেছেন। আমাদেরকে ব্যবসার মনোভাব ত্যাগ করে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাড়াতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে সরকারি নজরদারী বাড়াতে হবে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদেরকে সরকারি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যায়। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকে। তাই তাদের প্রশিক্ষণ দিলে তাদের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে বলে তিনি বিশ^াস করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করাতে না পেরে ভেঙ্গে পড়েন। এটি কাম্য নয়। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার উপর একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধা যাচাই হয় না। প্রতিটি স্কুলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আসন থাকে। আর সেই পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। তাই যারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না তারাও প্রকৃত অর্থে মেধাবী।