স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জের কুর্শি কার্প হ্যাচারী কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি টানা ১০ বছর একই এলাকায় কর্মরত থেকে দুর্নীতির বলয় গড়ে তুলে পুকুর খনন, আসবাবপত্র ও মাছের ওষুধ ক্রয়ের নাম করে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান বরাবরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে নি¤œমানের বেসরকারি হ্যাচারী থেকে রেণু সংগ্রহ, বিনা টেন্ডারে সরকারি গাছ বিক্রি, প্রশিক্ষণের নাম করে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এই দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সহকর্মীদের কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই কপালে জুটে বদলী অথবা বিভিন্নভাবে হয়রানী।
এছাড়া বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জ সদর ও বানিয়াচং উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে আজমিরীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে প্রশিক্ষণের নাম করে হাতিয়ে নেন বিপুল অংকের টাকা।
২০১০ সালে নবীগঞ্জে কুর্শি কার্প হ্যাচারী কমপ্লেক্সে যোগ দেন মোহাম্মদ আলম। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সেই সুবাধে গড়ে উঠেছে তার দুর্নীতির বলয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- তার ডান হাত হিসেবে কাজ করছেন বানিয়াচং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্ষেত্র সহকারী হাবিবুর রহমান।
জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১০ বছরে একাধিক অর্থ বছরে পুকুর ভরাটের নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অংকের টাকা। এর মাঝে শুধু ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরেই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আল আমিনের সহযোগিতায় পুকুর খননের নাম করে আত্মসাত করেন ৩৮ লাখ টাকা। একই অর্থ বছরে যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্পের ৩ লাখ টাকার পুরোটাই চলে যায় তার পকেটে। গত দুই বছরে সিলেট বিভাগের ১২টি উপজেলায় সরকারি পোনা সরবরাহ করলেও নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে পুরোটাই হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সূত্র মতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও মাধবপুর উপজেলায় পোনা অবমুক্ত করেন। এর আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের বিনা টেন্ডারে ৬টি বিশাল আকৃতির গাছ বিক্রি করে দেন হ্যাচারী কর্মকর্তা আলম। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১০ লাখ টাকা হবে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি বিধি মোতাবেক বেতন থেকে কোয়ার্টারের ভাড়া কর্তনের কথা থাকলেও তিনি তা করছেন না। সরকারি কোয়ার্টারে থেকেও কাগজেপত্রে তা দেখানো হচ্ছে না। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, গত অর্থ বছরে প্রান্তিক চাষীদের অংশগ্রহণে ৩০টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বারসহ তালিকা থাকার কথা থাকলেও অফিসে একটি প্রশিক্ষণেরও তালিকা করা নেই। অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণের টাকা রফাদফা করতে কর্মকর্তা আলমের সাথে কাজ করেছেন আরো এক কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণের ভাতা ও মালামাল ক্রয় বাবদ ৮ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন আলম। বানিয়াচং উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৩০টি প্রদর্শনী স্থাপন বাবদ ৬ লাখ টাকা ও বিল নার্সারী স্থাপন বাবদ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি। হ্যাচারী থেকে ৬টি গাছ কাটা হয়েছে। গাছ বিক্রির টাকাগুলো তিনি আত্মসাত করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় পুকুর খননের প্রকল্প গ্রহণ করলেও খননের আলামত সেখানে দেখা যায়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হ্যাচারীতে রেনু, পোনা ও মাছ বিক্রি সময় রশিদ দেয়ার কথা থাকলেও কর্মকর্তা আলম কোন প্রকার রশিদ দেননা। পরিবর্তীতে তিনি মনগড়া রশিদ তৈরি করেন। টাকাগুলো আত্মসাত করেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সরেজমিনে তদন্তের দাবি জানানো হয়।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com