চুনারুঘাটে পরিবেশ রক্ষায় বাগান শ্রমিকদের সাথে বেলা'র মতবিনিময় সভায় বক্তারা

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ বালু খেকো জিতু মিয়ার কাছ থেকে চা শ্রমিকদের শ্মশানঘাটও রক্ষা পাচ্ছে না। সে বড় বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে চা বাগানের ভুমি থেকে বালু উত্তোলন করে আবার চা বাগানের শ্রমিকদের শ্মশানঘাটের উপর দিয়েই বালু পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছে। তার কাছ থেকে আমরা জীবিত থাকতে শান্তি পাচ্ছি না আবার মরে যাওয়ার পরেও সে আমাদের লাশের উপর দিয়ে বালু নিচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা বার বার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। সুতাং নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে চা বাগানের বিপুল পরিমাণ জমি ভাঙ্গছে, ভাঙ্গছে রাবার বাগান, মন্দির, হাসপাতাল ও চা শ্রমিকদের ঘরবাড়ি। অনেকেই ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, হারিয়েছেন স্বজনকে। চাকলাপুঞ্জি চা বাগানে দুজন শ্রমিক বালু চাপায় মারাও গেছেন বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগান, চাকলাপুঞ্জি চা বাগান, বেগমখান চা বাগান ও চন্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) ডিফেন্ডিং এনভায়রনমেন্টাল রাইটস এন্ড প্রমোটিং জাস্টিস ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ করেন চা শ্রমিকরা। তারা বলেন, জিতু মিয়া বার বার সুতাং নদী লীজ এনে বালু উত্তোলনের নামে বাগানের এবং বস্তির জমি থেকে বালু উত্তোলন করছেন। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে অনেকেই সহায়সম্বল হারাচ্ছেন। চা শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, জিতু মিয়া বালু বিক্রি করে কোটিপতি হলেও চা শ্রমিকরা হচ্ছেন নি:স্ব। তাদের সহায় সম্বল চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। তাদের শ্মশান দখল করে সে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করছে। এবিষয়ে চা শ্রমিকরা বেলার সহযোগিতা কামনা করছে।
চান্দপুর নাচঘরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দেওরগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামছুন্নাহার চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুনারুঘাট রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বেলা ফিল্ড অফিসার আল আমিন সরদার, বেলা নেটওয়ার্ক মেম্বার জালাল উদ্দিন রুমি, চা শ্রমিক নেতা স্বপন সাওতাল। বক্তব্য রাখেন পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন সাওতাল, চা শ্রমিক নেতা শ্যামসুন্দর রায়, বিষ্ণু কালিন্দি, ক্ষতিগ্রস্ত দেবী কর্মকার, সনকা বড়াকসহ স্থানীয় সুধীজন।
অভিযোগকারী সাধন সাঁওতাল বলেন, প্রভাবশালী মহলের একটি অংশ নিয়মিত বালু উত্তোলন করছে। তারা আমাদের শ্মশানঘাট পর্যন্ত ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লাশের উপর দিয়ে বালু নেয়। চোখের পানি ফেলে চাকলাপুঞ্জির দেবী কর্মকার বলেন, আমার ঘরটি ইতোমধ্যে ভেঙ্গে গেছে। রাতে ভয়ে ঘুম হয় না, সন্তানদের নিয়ে ভয়ে রাত কাটাই কখন যে ঘর ভেঙ্গে ছড়ায় তলিয়ে যায়। জোয়ালভাঙ্গা ডিভিশনের চা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য সনতা ভার্তা বলেন খুব দ্রুততার সাথে এসব বন্ধ করা না গেলে একসময় বাগানগুলোর অস্থিত্বে আঘাত আসবে। শ্যামসুন্দর রায় বলেন, চা বাগানের জমি থেকে বালু উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যে আমাদের বাগানের রাবার বাগান ভেঙ্গে পড়ছে। অনেকে রাবার গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে।
স্থানীয়রা জানান, জিতু মিয়া সুতাং নদীর ক খ ও গ অংশ দখলে নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে। নদীতে এখন বালু নেই, কিন্তু সে নদীর পাশ থেকে মাটির নিচ ভেঙ্গে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তার সাথে প্রভাবশালী একটি মহল জড়িত থেকে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে। সে বার বার হাইকোর্টের একটি আদেশ দেখিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম করছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।