আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহিন বনে উদ্ধারকৃত ১৩টি রকেট লঞ্চার ও ১১টি চার্জার ধ্বংস করা হয়েছে। রবিবার দুপুর ১টায় উদ্ধারকৃত স্থানেই সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন (সিলেট) এর অধীন ২১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল পর পর দুবার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসব রকেট লঞ্চার সেল ধ্বংস করে। এতে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মোঃ আসাদুল্লাহ হীল গালীব আরাফাত। এসময় চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ফাতিমা ও র্যাব-৯ এর ডিএডি মিজানুর রহমানসহ র্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রথমে ৭টি ও পরে ৬টি করে লঞ্চারগুলো দুইবারে দুটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় বিকট শব্দে কেপে উঠে পুরো সাতছড়ি পাহাড় ও আশপাশ। ধুয়ার কুন্ডলীতে অন্ধকারে ঢেকে যায় পাহাড়ের চারপাশ। এসময় প্রায় ৫০ ফুট দূরে অবস্থানরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনা ও র্যাব সদস্যরা নড়েচড়ে বসেন। সবাই হাত দিয়ে কান বন্ধ করে বিস্ফোরণ উপভোগ করেন।
এর আগে হবিগঞ্জ আমলী আদালত থেকে এসব গোলাবারুদ ধ্বংসের জন্য বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ফাতিমা বিস্ফোরক ধ্বংসের সময় উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাপ্টেন আরাফাত জানান, ট্যাংক বিধ্বংসী এসব রকেট লাঞ্চার দীর্ঘ বছর পর্যন্ত সচল থাকে। এটি ৫০০ মিটার পর্যন্ত আঘাত আনতে পারে। একই সাথে এসব রকেট লঞ্চার বড় বড় ট্যাংক ধ্বংস করতে পারে।
সাতছড়ি টিপরা পল্লীর হেডম্যান চিত্ত দেববর্মা বলেন, বিস্ফোরণের সময় পুরো সাতছড়িই যেন কেপে উঠেছে। দুপুর ১টার দিকে আমি দোকানে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে কেপে উঠে আমার দোকান। আমি ভয়ে দৌঁড় দিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। একই সময়ে পার্কে থাকা অনেকেই আতংকিত হয়ে পড়েন। পর পর দুবার বিস্ফোরণের বিষয়টি অনেকেই জানতেন না। তাই তারা কিছুটা ভয়েই ছিলেন।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ফাতিমা জানান, একটু ভয়ই পেয়েছি, তবে বেশ উপভোগ করেছি এমন বিস্ফোরণ ও বিকট শব্দ। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ১৩টি লঞ্চার বিস্ফোরণ ঘটান।
সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং র্যাব-৭ (চট্টগ্রাম অঞ্চল) এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহিন বনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪০ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ১৩টি রকেট লঞ্চার সেল, ১১টি চার্জার ও ১৩টি পাইপ উদ্ধার করে। এতে নেতৃত্ব দেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মশিউর রহমান জুয়েল। এক পর্যায়ে তাদের এ অভিযানে যুক্ত হন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন। এতে সহায়তা করে র্যাব-৯ এর একটি দল। এ নিয়ে র্যাব-৯ এর উপ-পরিদর্শক সোহেল সরকার চুনারুঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলো খুব নাজুক অবস্থায় থাকায় ঘটনাস্থলেই ধ্বংস করার জন্য সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন (সিলেট) এর অধীন ২১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন এর বিশেষজ্ঞদের কল করা হয়। সে মোতাবেক গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় ক্যাপ্টেন আরাফাত এর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দুপুর ১টা ৫ মিনিট ও ১টা ৩৫ মিনিটে এসব লঞ্চার বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস হয়।
বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠে গোটা পাহাড় ॥ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ফাতিমা বললেন বিকট শব্দে একটু ভয়ই পেয়েছি, তবে বেশ উপভোগ করেছি
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com