পাঠকের কলাম

মোহাম্মদ আলী মমিন

জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের আগ্রহ ও প্রত্যাশানুযায়ী যুগোপযোগী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করায় হবিগঞ্জ পৌর এলাকা গড়ে উঠতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম তিলোত্তমা ও দৃষ্টিনন্দন শহরে। এ প্রত্যাশা পূরণে খোয়াই রিভারভিউ এলাকা ও বাইপাস সড়ক থেকে সফলভাবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং প্রস্তাবিত খোয়াই ঝিলমিল প্রকল্পের পরিত্যক্ত খোয়াই থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। সরজমিনে ও প্রশাসন সূত্রে প্রকাশ, “খোয়াই রিভারভিউ” এলাকার শহর প্রান্তের নদীরপাড় নোয়াবাদ থেকে গরুর বাজার পর্যন্ত শতভাগ অবৈধ স্থাপনা দালানকোঠা এক্সেভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং অংশ বিশেষ উন্নয়ন করা হয়েছে এবং একাধিক সতর্কতা সংক্রান্ত বিলবোর্ড সাটানো হয়েছে। নদীর অপর প্রান্তের সকল অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদের দাবি জানাচ্ছে পৌরবাসী। তারপরই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে চার লেন সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে কামড়াপুর থেকে ধুলিয়াখাল পর্যন্ত ৭ কিঃমিঃ রেলভূমি থেকে ৯৯ ভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যদিও ইদানিংকালে ঐ ভূমিতে বিভাগীয় মনিটরিং না থাকায় দৃষ্টিকটু ত্রিপালের ছাউনীর ঘর গজাতে দেখা যাচ্ছে। জনগণ ঐসব স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। এছাড়া সড়ক পার্শ্ববর্তী ভূমির মালিকদের বিল্ডিং কোড মে/২০০৮ ও স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত অক্টোবর ৮, ২০১৮ আইন বিষয়ে সচেতনতা সমীচীন। গেজেট পৃষ্ঠা ৩০ এ বলা হয়েছে (৩) রাস্তার প্রশস্ত যাহাই থাকুক না কেন, বিদ্যমান রাস্তার কেন্দ্র হইতে সাড়ে ৪ মিটার অথবা প্রস্থের সীমানা হইতে দেড় মিটার দুরত্বের মধ্যে যাহা অধিক রাস্তার প্রশস্ত বর্ধিত করণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি বাদ দিয়া তাহার চাইতে কম দুরত্বে কোন ইমারত নির্মাণ করা যাবে না। অর্থাৎ সড়কের সীমানা থেকে দেড় মিটার অর্থাৎ ৫ ফুট জায়গা খালি রেখে দালান/অবকাঠামো নির্মাণ বাধ্যতামূলক। এছাড়া মহাসড়কের আইনে রয়েছে, ৩৭। মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী অবৈধ স্থাপনা অপসারণ:- (১) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পুরণকল্পে, কোনো ব্যক্তি, ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, মহাসড়কের মালিকানাধীন জায়গায় বা ক্ষেত্রমত, মহাসড়কের ঢাল (ঝষড়ঢ়ব) হইতে উভয় পার্শ্বে ১০ (দশ) মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা (যেমন: হাটবাজার, দোকান ইত্যাদি) নির্মাণ করিতে পারিবেন না। (২) মহাসড়কের মালিকানাধীন জায়গায় বা ক্ষেত্রমত, মহাসড়কের ঢাল (ঝষড়ঢ়ব) হইতে উভয় পার্শ্বে ১০(দশ) মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে নির্মিত কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা (যেমন হাটবাজার, দোকান ইত্যাদি) নির্মাণ করিতে পারিবেন না (২) মহাসড়কের মালিকানাধীন জায়গায় বা ক্ষেত্রমত মহাসড়কের ঢাল (ঝষড়ঢ়ব) হইতে উভয়পার্শ্বে ১০ মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে নির্মিত বা অস্থায়ী স্থাপনা মহাসড়কে নিরাপদে মোটরযান চলাচল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ বা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বা তৎকর্তৃক এতদদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি তাৎক্ষনিকভাবে উহা অপসারণ করিতে পারিবে। ৮২। মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ তাৎক্ষনিক অপসারণ সংক্রান্ত ধারা ৩৭ এর বিধান লঙ্ঘনের দন্ড- (১) যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৩৭ এর উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্গন হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদন্ড বা স্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা এবং অস্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
এদিকে ৪০ বছরের পরিত্যক্ত খোয়াই নদীকে ঢাকার হাতিরঝিলের অনুকরণে ২ হাজার কোটির খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে “খোয়াই রিভার ভিউ” ও “খোয়াই ঝিলমিল” অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এদিকে নদী সংক্রান্ত রীট মোকদ্দমায় রায় (২৭৭-২৮৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত) হাইকোর্ট সুপ্রীমকোর্টের বাধ্যতামূলক পালনীয় নির্দেশাবলী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর আদেশ, জনগণের উৎসাহ ও জনপ্রতিনিধিদের প্রেরণায় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ পরিত্যক্ত খোয়াই থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। উচ্ছেদে অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও হবিগঞ্জ পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে জেলা পরিষদ পর্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। গাছপালা সরিয়ে না নেয়ায় খোয়াই ঝিলমিলের এলাইনমেন্ট দৃশ্যায়ন হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রকল্পের মূল ভূমির অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিতকরণের শুরুতেই কারিগরি জনবলের অভাবে উচ্ছেদ অভিযানে কচ্ছপ গতি লক্ষ্যনীয়। এদিকে ডিসি বদলী জনিত কারণে চলমান উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে জনমনে শংকা দেখা দিয়েছে। আবার উচ্ছদ বাস্তবায়নে ১০ লক্ষ টাকা সরকারী বরাদ্দও ছাড় দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন সার্বিক বিবেচনায় বলেন, বিগত ডিসিদের উচ্ছেদ অভিযান এবং বর্তমান ডিসি মাহমুদুল কবীর মুরাদ এর ভূমিকা আকাশ-পাতাল। হবিগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিসি মাহমুদুল কবীর মুরাদের সফলতা অনুসরণীয়, অনুকরনীয় ও অতুলনীয়। ফলে নয়া ডিসি সরকারের অগ্রাধিকার চলমান উচ্ছেদ কার্যক্রম তরান্বিত করবেন এটাই ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের পূর্বাভাস।