হবিগঞ্জে ৬শ’ দখলদারের নাম তালিকাভূক্ত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামীকাল সোমবার হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীর উপর নির্মাণ করা বাসাবাড়িসহ সব ধরণের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। উচ্ছেদ অভিযানের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার দিনভর মাহমুদাবাদ ও শায়েস্তানগর এলাকায় পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা চিহ্নিত করেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মাসুদ রানা। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ তাঁর সাথে ছিলেন।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ভূমি মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শনিবার সারাদিন শহরের শায়েস্তানগর ও মাহমুদাবাদ এলাকায় পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা চিহ্নিত ও মাপজোক করেছি। তবে আমরা কোন তালিকা তৈরি করিনি। উচ্ছেদ দ্রুত বাস্তবায়ন করার কাজ সম্পন্ন করে যাচ্ছি। এদিকে শুক্রবারের ন্যায় গতকাল শনিবারও মাহমুদাবাদ ও শায়েস্তানগর এলাকায় নদীর জায়গা থেকে নিজেদের বাসা-বাড়িসহ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। নদীর উপর নির্মিত বাসাবাড়ির মালিকরা জানিয়েছেন যেহেতু প্রশাসন উচ্ছেদের জন্য জায়গা চিহ্নিত করেছেন, সেই জায়গাগুলো অবশ্যই উচ্ছেদ হবে। প্রশাসন উচ্ছেদ করলে আমরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই নিজেরাই নিজেদের স্থাপনা ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছি।
এদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরাতন খোয়াই নদীর প্রভাবশালী দখলকাররা তাদের বহুতল বিশিষ্ট বাসা-বাড়ি রক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ মহলসহ উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করছেন। তবে প্রশাসন ওই জায়গা উচ্ছেদের জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় দখলকারীরা পড়েছেন অনেকটা বিপাকে। গত বুধবার শহরের মাহমুদাবাদ থেকে পইল রোডের গাউছিয়া একাডেমী পর্যন্ত পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন পুরাতন খোয়াই নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চায়। মাহমুদাবাদ এলাকা থেকে অভিযান শুরু করা হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। উচ্ছেদ অভিযানে কেউ বাধা প্রদান করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে, সারাদেশে নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছে সরকারি সংস্থা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। খুব শিগগির কমিশনের ওয়েবসাইটে দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তালিকা অনুযায়ী দেশের ৬১ জেলায় দখলদারের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৭৪২ জন। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় নদী দখলদারের সংখ্যা ৯৫৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাইকোর্টের ১৩৯৮৯/২০১৬ নম্বর রিট পিটিশনের আদেশ সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নদ-নদীর অবৈধ দখলদারদের এ তালিকা জনস্বার্থে প্রকাশ করা হবে।
এ ব্যাপারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য আলাউদ্দিন বলেন, চিহ্নিত অবৈধ নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সব জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তারাই এসব দখলদারের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। তালিকায় সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে ৬৯৬ জন, মৌলভীবাজারে ৪৬৮, সিলেটে ২৪৪ ও হবিগঞ্জে ৬০০ জনের নাম আছে। প্রতি জেলায় দখলদারদের নাম-ঠিকানা উম্মুক্ত স্থানে টাঙিয়ে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন ঃ হবিগঞ্জ শহরে আলোচিত পুরাতন খোয়াই নদী দখলদারদের কবল থেকে উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করবেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ। আজ রবিবার বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।