‘আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বলছি- ৫টি টিউবওয়েল বরাদ্দ এসেছে, টিউবওয়েল পেতে বিকাশে ফি পাঠান’

মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিপ টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারকচক্র। আর ওই দিনই অল্পের জন্য প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও একই এলাকার আরেকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ২নং বড় ভাকৈর ইউনিয়নে।
সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে বড় ভাকৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশিক মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ০১৬৩৯-৫৯৮৯৮৯ নম্বর থেকে কল আসে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের লোক পরিচয় দিয়ে কলদাতা চেয়ারম্যানকে বলে- ‘স্থানীয় এমপির মাধ্যমে ২নং বড় ভাকৈর ইউনিয়নে ১২০০ ফুট পাইপ ও মোটরসহ ৫টি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ এসেছে। আপনি আপনার এলাকার ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দেন।’ কথামতো চেয়ারম্যান আশিক মিয়া ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দেন।
এর কিছুক্ষন পর ওই ইউনিয়নের বাগাউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিয়ার আলীর মোবাইল ফোনে কল দেয় ওই লোক। সে নিজেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দাবি করে বলে- ‘ আমি নবীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বলছি- আপনার বিদ্যালয়ের জন্য ১২০০ ফুট পাইপ ও মোটরসহ একটি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ এসেছে। টিউবওয়েলটি নিতে চাইলে এর ফি ৬ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে চেয়ারম্যান আশিক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করেন, বরাদ্দ যে এসেছে তা চেয়ারম্যান জানেন।’ এসব কথা বলে (০১৯৫২-২৯৮৪৭৯) একটি বিকাশ নম্বর পাঠায়। এসময় সে বলে- ‘আজই শেষ তারিখ, তাড়াতাড়ি ফি না পাঠালে প্রজেক্ট ফেরত চলে যাবে।’ সময় ক্ষেপন না করে ওই নম্বরে ৬ হাজার ১ শত ২০ টাকা পাঠিয়ে দেন শিক্ষক পিয়ার আলী। টাকা পাঠানোর পর থেকেই আর কোন কল রিসিভ করে না কথিত ওই ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী’। এ সময় তিনি বুঝতে পারেন আসলে তিনি প্রতারণার শিকার। কিন্তু তিনি টাকা পাঠানোর আগে চেয়ারম্যান আশিক মিয়ার সাথেও যোগাযোগ করেছিলেন। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে ঘটনার এমনই বর্ণনা দেন শিক্ষক পিয়ার আলী।
অপরদিকে, একই সময়ে ওই ইউনিয়নের কাজিগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য খালেদ মোশারফের তৎপরতায় অল্পের জন্য প্রতারণার শিকার থেকে রক্ষা পেয়েছেন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল শামসুল ইসলাম। প্রিন্সিপাল শামসুল ইসলাম বলেন- ওই সময়ে তার মোবাইলে ০১৬৩৯-৫৯৮৯৮৯ নম্বর থেকে কল দিয়ে বলে- ‘সে নবীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস থেকে কল দিয়েছে মাদ্রাসায় একটি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ এসেছে। টিউবওয়েল পেতে বিকাশে এর ফি বাবদ ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। কোথা থেকে বরাদ্দ এসে বিস্তারিত জানতে চাইলে ওই প্রতারক প্রিন্সিপালকে বলে ‘এতো কথা বলার সময় নেই, বিস্তারিত জানতে প্রয়োজনে চেয়ারম্যান আশিক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করেন। পরে প্রিন্সিপাল শামসুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ারম্যান আশিক মিয়া ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খালেদ মোশারফের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে খালেদ মোশারফ নবীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এ ধরনের কোন বরাদ্দ আসেনি। পরে প্রিন্সিপালকে টাকা না পাঠানোর জন্য বলেন। কিছুক্ষন পরই তারা জানতে পারেন বাগাউরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকেও টাকা পাঠানো হয়েছে। পরে তাদের কল রিসিভ করছে না। এক পর্যায়ে ওই প্রতারকচক্রের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় পুরো এলাকায়।
বড় ভাকৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশিক মিয়া বলেন, ‘আমি একটি সালিস বৈঠকে ছিলাম ওই সময়ে একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে এক লোক সে নিজেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দাবি করে বলে স্থানীয় এমপির মাধ্যমে আমাদের ইউনিয়নের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫টি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ এসেছে। এ সময় সে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়ার জন্য বললে আমি নাম দেই। পরে ওই প্রতারক বলে প্রতিটি টিউবওয়েলের জন্য ৬ হাজার টাকা করে দিতে হবে। আমি বলেছি টিউবওয়েলের সব মালামাল পাঠালে পরে টাকা দেব।’
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকারিয়া আহমেদ বলেন, ‘আমার কার্যালয় থেকে এ ধরনের ফোন কাউকে দেওয়া হয়নি এবং আমার অফিসের কেউ জড়িতও না। মূলত একটি প্রতারক চক্র এমন কাজ করছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন জায়গায় কল দিয়ে আমাদের অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা করেছে। বিষয়টি নবীগঞ্জ থানার ওসিকে অবগত করেছি।’
এ ব্যপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন- ‘নাম্বার যাচাই করে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতারক চক্রকে ধরতে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোন প্রতারক চক্র এভাবে প্রতারণা করতে না পারে।’