মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ প্রেম মানে না জাত-পাত, মানে না কোনো ধর্ম। এই প্রেমের জন্য অনেকেই জীবন দিতে পারে। পাড়ি দিতে পারে সাত সাগর তের নদী। এরকম অসংখ্য নজির আমরা দেখেছি। এবার তেমনই এক “অসম্ভব সত্য” ঘটনা সামনে এসেছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত সেটি প্রেম ছিল না, ছিল প্রেমের নামে প্রতারণা। এমনই এক অভিযোগ করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন নবীগঞ্জের এক হিজড়া।
জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলায় শাহনাজ পারভিন হিজড়ার সঙ্গে যুবক সাইফুলের গভীর প্রেমের সম্পর্ক। এক সময় এই প্রেমের সম্পর্ক গড়ায় বিয়েতে। তবে এই বিয়ে নিয়ে যুবকটি যা করল, সেটা চরম অমানবিক। যুবকের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া প্রেমিকা হিজড়াকে এ জন্য দিতে হলো চরম মূল্য। যুবককে জীবনসঙ্গী করতে যখন প্রেমিকা পাগলপ্রায়, ঠিক তখনই যুবকটি নিল প্রতারণার আশ্রয়। বলল, বিয়ে করতে হলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিতে হবে।
সমাজে অবহেলিত এই হিজড়ার পক্ষে এত টাকা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রেমে অন্ধ হিজড়া তো নাছোড়। মনের মানুষকে কাছে পেতে ৬ লাখ টাকায় নিজের কিডনি বিক্রি করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা তুলে দিল যুবকটির হাতে। টাকা পেয়ে তাদের মধ্যে বিয়েও হলো। কিন্তু ভালোবাসার তুলনায় যার কাছে টাকাই সব, সে কি আর এই অসম বিয়ে টিকিয়ে রাখবে? হলোও তা-ই। দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়ে ভেঙে গেল বিয়ে। কিডনি, টাকা সবই গেল এই হিজড়ার। নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়নের হরিনগর ও বাগাউড়া গ্রামের এ ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার সকালে ইউনিয়ন অফিসে ইউপি চেয়ারম্যান আশিক মিয়ার নেতৃত্বে এ ব্যাপারে এক সালিস বৈঠক হয়। এমসয় এমনই ঘটনার বর্ণনা দেয় ওই হিজড়া।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হরিনগর গ্রামের গিয়াস মিয়ার ছেলে শাহ আলম ওরফে শাহনাজ পারভিন হিজড়ার সঙ্গে বাগাউড়া গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে সাইফুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমিককে খুশি রাখতে শাহ আলম (শাহনাজ পারভিন) প্রায়ই প্রেমিক সাইফুলকে তার উপার্জনের টাকা দিয়ে আসত। ধীরে ধীরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। প্রেমিকা শাহনাজ পারভিন যখন প্রেমিক সাইফুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়, তখন সাইফুল তাকে একটি শর্ত দেয়। সাইফুল শাহনাজ পারভিনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার বিনিময়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। সাইফুলের কথায় রাজি হয়ে প্রেমিকা শাহনাজ পারভিন তার একটি কিডনি বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা পায়। এর মধ্যে সাইফুলকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার পর তাদের বিয়ে হয়। হিজড়ার সাথে যুবকের বিয়ে, এ খবর নবীগঞ্জ উপজেলায় জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পরে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে বুধবার সকালে বড়ভাকৈর ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বৈঠক বসে। সালিসে ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে শাহ আলম ওরফে (শাহনাজ পারভিনকে) ১ লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।
৬ লাখ টাকায় কিডনি বিক্রি করে বিয়ের খরচ সাড়ে ৪ লাখ টাকা তুলে দেয় প্রেমিকের হাতে
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com