টমটম বন্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই ॥ মালিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বললেন টমটম বন্ধ করা হলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে, পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বে তারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরে প্রশাসনের টমটম চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। তবে টমটম চালক, মালিক, টমটম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন। এতে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বেন। এ অবস্থায় শহরে টমটম চলাচল একেবারে বন্ধ না করার আহ্বান জানান তারা। টমটম চলাচলে শহরে অল্প সময়ের জন্য যানজট সৃষ্টি হলেও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় না। টমটম পরিবেশ বান্ধব। অপরদিকে সিএনজি অটোরিকশা পরিবেশ বান্ধব নয়। বুধবার পরিচ্ছন্ন হবিগঞ্জ গড়ার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, ক্রমেই হবিগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত করতে টমটমকে শহর থেকে বিদায় করে দেয়া হবে। পাশাপাশি শহর থেকে টমটম বিক্রির দোকানগুলো সরিয়ে দেয়া হবে। টমটম চার্জের জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা অবৈধ গ্যারেজগুলোও সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হবে। যে সকল টমটমের লাইসেন্স আছে, সেগুলো নবায়ন করা হবে না। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে হবিগঞ্জ শহরে বিশেষ রঙের সিএনজি অটোরিকশা সার্ভিস চালু করা হবে। বিশেষ রঙ বলতে যে রঙ দেখলে সাধারণ যাত্রীরা বুঝতে পারেন এটি শহরের সিএনজি অটোরিকশা। এই সার্ভিস চালু হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি চলাচলে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, এই সিদ্ধান্ত হবিগঞ্জ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি আরটিএ সভায় শীঘ্রই অনুমোদন করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় গতকাল বৃহস্পতিবার গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবর প্রকাশের টমটমের পক্ষে বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান অনেকেই।
বানিয়াচঙ্গের আতাউর রহমান মিলন তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন প্রশাসন সুন্দর একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, এজন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। উমেদনগরে বাসিন্দা অপু আহমেদ রওশন জানান, শহরে টমটম বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে একটি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, হবিগঞ্জ শহরে আয়তনের চেয়ে বেশি টমটম চলাচল করছে। এতে শহরে প্রতিনিয়তই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে হাজার হাজার টমটম পুরাতন ব্যাটারীগুলো যেখানে ফেলা হয় এর ক্ষতিকারক ক্যামিকেল পরিবেশ ধ্বংস করছে। এছাড়াও টমটমের ব্যাটারী চার্জের কারণে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটছে। অধিকাংশ টমটম তুলে নেয়াকে স্বাগত জানাই।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা টমটম শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর সভাপতি নুরুল আমিন জানান, অতীতে আমরা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শহরের টমটম চালিয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল শহরের ১ হাজার ২শ’ দুই কালারের টমটম চলাচল করবে। একদিন এক কালারের ৬শ’ টমটম শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করবে। আরেক কালের ৬শ’ বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করবে। পরে বাইপাস সড়কের টমটমগুলো প্রধান সড়কে ও প্রধান সড়কের টমটমগুলো বাইপাস সড়কে চলাচল করবে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেটা আমরা করতে পারেনি। তিনি বলেন, প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, টমটম পরিবেশ বান্ধব একটি পরিবহন। এ পরিবহন চালিয়ে হাজার হাজার শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, বেকার যুবক পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন। টমটম বন্ধ করে দিলে টমটম চালক পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ে যাবে। তাই আমাদের অনুরোধ টমটম শহরে বন্ধ না করে শৃঙ্খলা অনুযায়ী চলাচলের জন্য যে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে আমরা তা মাথা পেতে নেবো। অপরদিকে টমটম বন্ধ করে সিএনজি অটোরিকশা চালুর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে সেটি কতটা যুক্তি সংগত তা আমার জানা নেই। তবে সিএনজি অটোরিকশাগুলো শহরে ধোয়া ছড়াবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে আমি মনে করি।
হবিগঞ্জ শহরের টমটম ব্যবসায়ী উস্তার মিয়া জানান, শহরে টমটম বিক্রির দোকান বন্ধ করে কোন লাভ হবে না। টমটম বিক্রি বন্ধ করতে হলে এর আমদানী বন্ধ করতে হবে। আমাদের দোকান বন্ধ করে প্রশাসনের কি লাভ হবে। টমটম যারা চালান তারা হবিগঞ্জে না পেলে পাশ^বর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাবে। এছাড়াও আমরা নতুন কোন টমটম শহরে বিক্রি করছি না। যেগুলো বিক্রি হচ্ছে তা শহরের বাইরে। টমটম ও এর মালামাল বিক্রি করেন জেলার প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী। এর মধ্যে হবিগঞ্জ শহরে ৩০ জন। কিন্তু সারা দেশে হাজার হাজার টমটমের দোকান রয়েছে। সেগুলো বন্ধ করতে পারবেন না। এছাড়াও টমটম একটি পরিবেশ বান্ধব যানবাহন। এ যানবাহনে ৫ টাকা দিয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আসা যাওয়া করা যাচ্ছে। কিন্তু অন্য কোন পরিবহনে ৫ টাকা দিয়ে যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে না। আর প্রশাসন যে পরিবহন চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সেই পরিবহন ধোয়া ছড়ায়। তাই আমরা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাবো, হাজার হাজার শ্রমিকরা যে পরিবহন দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন সেই পরিবহনটি বন্ধ করবেন না।