মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব বড়চর গ্রামের মন্টু দেবের কন্যা মুক্তি। সে শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে আসছিল। এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার নিদারাবাদ গ্রামের উপেন্দ্র দাশের ছেলে শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর বাজারের স্টুডিও ব্যবসায়ী কিশোর কুমার দাশের সাথে তার প্রেম হয়। ধীরে ধীরে প্রেম থেকে তারা উভয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ঘর সংসার করার।
৯ম শ্রেণিতে লেখাপড়া অবস্থায় ২০০০ সালে কিশোরের সাথে ভালোবাসার লাল রঙে রঙিন হল মুক্তি। সাতপাক ঘুরে, অগ্নিকে সাক্ষী রেখে একে-অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেন। সাক্ষী থাকল মনের বিশ্বাস।
কিন্তু প্রায় ১৯ বছরে এসে চলতি বছরের ১০ জুন ভালবাসার এ বিশ্বাস ধ্বংস হয়ে গেল। কিশোর কঠিন কাঠের লাঠি দিয়ে মুক্তি দাশকে আঘাত করে। বিয়ের পর থেকে একের পর এক আঘাত সহ্য করে আসছিল। অবশেষে এ আঘাতে মুক্তি দাশকে শারীরিকভাবে গুরুতর আহত করে ফেলে। তাকে নিয়ে যাওয়া হল হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা হলেও মৃত্যুর কাছ থেকে মুক্তি দাশ আর মুক্তি পেল না। সে পরপারে চলে যায়। ঘটনার পর থেকে ঘাতক স্বামী কিশোর কুমার দাশ পলাতক। আর মুক্তির রেখে যাওয়া দুই পুত্র সন্তান মা হারা শোকে কাতর।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ আব্দুর রকিব ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আল রিয়াদের নেতৃত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মামুন চৌধুরী, সদস্য জামাল আহমেদ রাজ পরিদর্শনে গেলে নিহত মুক্তির পিতা মন্টু দেব ও মা ঝর্ণা দেব কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব কথা বলেন।
মুক্তি হত্যা মামলার বাদী তাঁর মা ঝর্ণা দেব বলেন- পুলিশ কিশোরকে ধরার চেষ্টা করছে। আমাদের ও পুলিশের ধারণা হয়, সে (কিশোর) পালিয়ে ভারত চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, মুক্তি কিশোরকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। আর কিশোর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে এ ভালবাসার প্রতিদান দিলো। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা ঘাতক কিশোরের ফাঁসি দাবি করছি।
তিনি জানান, কিশোর স্টুডিও ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসায় চলে যায় বড়লোক হওয়ার আশায়। কিন্তু ফল ভাল হয়নি। নিয়মিত মাদক সেবন করতে থাকে। সে টাকার জন্য মুক্তির উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। স্বামীর মন রক্ষায় মুক্তি অলিপুরে আরএফএলে চাকরি নেয়। ১০ হাজার টাকার মাসিক বেতনে সংসার চালানো কঠিন। কিশোরও এ কোম্পানীতে চাকরি নেয়। কিশোরের ৬ হাজার ও মুক্তির ১০ হাজার মিলিয়ে মোটামুটি ভাবে সংসার চলার কথা।
কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ায় এ টাকায় সংসার চলছিল না। কিশোর মুক্তির কাছে প্রায়ই মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছিল। না দিলে নির্যাতন শুরু হত। নির্যাতন সহ্য করে মুক্তি স্বামী কিশোর ও দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে সংসার করে আসছিল। অবশেষে মোটা অংকের টাকার জন্যই অলিপুরের ভাড়াটিয়া বাসায় কিশোর মুক্তিকে হত্যা করেছে। তিনি জানান, মুক্তির বড় ছেলে রাজ দাশকে (১৫) আমরা নিয়ে এসে লেখাপড়া করাচ্ছি। সে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমীর ১০ম শ্রেণির ছাত্র। আর ছোট ছেলে সাজ দাশ স্বর্ণের দোকানে কাজ করে।
মুক্তির ভাই সাবেক পৌর ছাত্রলীগ নেতা অপু দেব বলেন, বোন মুক্তি আমাদের মাঝে নেই। এটা মেনে নিতে পারছি না। এখন চাওয়া একটাই ঘাতক কিশোরসহ দায়ীদের ফাঁসি।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, ঘাতক পালিয়ে রক্ষা পাবে না। পুলিশ তাকে ধরতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। গুরুত্বের সাথে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। মামলা তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই আব্দুল মুকিত চৌধুরীকে।
বিএইচআরসি উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ আব্দুর রকিব ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আল রিয়াদ বলেন, এ ঘটনা নির্মম। তা মেনে নেওয়া যায় না। ঘাতককে দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি।
বিএইচআরসি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নেতৃবৃন্দের পরিদর্শন
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com