
ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। ইসলাম নামক ধর্মকে আল্লাহ্ তাআলা প্রণয়ন করেছেন মানুষের শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণে। ইসলামের সেই কল্যাণ থেকে বাদ নেই কোন সৃষ্টিও। আর সেই সৃষ্টির সেবার মধ্যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি নিহীত। আল্লাহ্কে পেতে হলে এবাদতের পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টিকেও ভালবাসতে হবে। আল্লাহর কোন সৃষ্টিকে কষ্ট দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি কল্পনাতীত।
আজকের প্রবন্ধে আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টিকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এক. যারা কখনো আল্লাহর সাথে কুফুরি করে না, সব সময় আল্লাহর তাছবীহ্ পড়ে, আনুগত্য করে, হুকুম মেনে চলে। আর তারা হচ্ছে মানুষ এবং জীন ব্যতিত আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টি। দুই. এই প্রকার সৃষ্টির একদল আল্লাহকে মেনে চলে, আনুগত্য করে, আল্লাহর দ্বীনের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখে। আরেক দল যারা আল্লাহকে স্বীকারই করে না বরং তার সাথে কুফুরি করে, আর তারা হলো জীন এবং মানুষ। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো- আল্লাহ্ এমন একজন নিরপেক্ষ পালনকর্তা বা রব যিনি উভয়কেই লালন পালন করেন।
আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন। এ প্রতিনিধিত্ব তাঁর জাতের প্রতিনিধিত্ব নয় বরং সিফাতে প্রতিনিধিত্ব। আল্লাহ তাআলার যতগুলো সিফাত বা গুণাবলী রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিনি ‘রব’ বা পালনকর্তা, সেবা দানকারী।
পবিত্র কুরআনের সুরাতুল বাক্বারার ৩০নং আয়াতে বলেন- ‘আর যখন তোমার প্রতিপালক (রব) ফেরেস্তাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই’। আল্লাহ্ তাআলা এই আয়াতে তাঁর ইসমে জাত ‘আল্লাহ্’ শব্দটি ব্যবহার না করে ইসমে সিফাতে ‘রব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
এখানে ‘রব’ শব্দটি ব্যবহার করে আল্লাহ এ কথা স্পষ্টভাবে বুঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর পালনবাদী নীতির প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, ‘রব’ প্রভূ হচ্ছে তাঁর যাবতীয় সৃষ্টির স্রষ্টা, পালনকর্তা এবং তাদের জীবন ধারনের সার্বিক প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বিতরণকারী যাদের চিন্তা-চেতনা, দর্শন ও কর্মপন্থা রাব্বুল আলামীনের এ পালনবাদী নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তাদেরকে কুরআনের ভাষায় রব্বানী বলা হয়। এজন্য আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় বান্দাদের রব্বানী হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন- আল্লাহ্ বলেন, ‘কোনো রাব্বানিয়্যিনা’ অর্থ তোমরা রব্বানি হয়ে যাও। (সুরা আল ইমরান-৭৯)
ইসলামের শিক্ষা শোষণ ভিত্তিক নয় বরং আল্লাহর পালনবাদী নীতির ভিত্তিতে হতে হবে। যারা নিজের ও আল্লাহর অপরাপর সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর পালনবাদী নীতি অনুযায়ী আচার আচরণ করতে পারে তারাই রব্বানী। সহজ কথায়- ইসলামের মূলমন্ত্র হচ্ছে সৃষ্টির সেবা আর এটাই ¯্রষ্টার শ্রেষ্ঠ ইবাদত। রব্বানী দৃষ্টিভঙ্গি এ কথাই শিক্ষা দেয় যে, যে কোন কথা, কর্ম, আচরণ নিজের জন্য বা অপরের জন্য অকল্যাণকর তাই পাপ আর যা কল্যাণকর তাই পূণ্য।