এসএম সুরুজ আলী ॥ বানিয়াচঙ্গ উপজেলার পুকড়া গ্রামে পুকুর পাড় থেকে ইউপি মেম্বার অরুন দাশের (৬৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে গ্রামের ফারুক মিয়ার পুকুর পাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি পুকড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। তবে নিহতের পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বিকেলেই নিহতের লাশের ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় দাহ সম্পন্ন করা হয়।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সোমবার সকালে অরুণ দাশ বানিয়াচঙ্গ থানায় যান। থানায় কাজ শেষে তিনি একই ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামে শ^শুর বাড়িতে একটি ধর্মীয় উৎসবে যান। সন্ধ্যায় ছেলে অনন্ত দাশের সাথে মোবাইল ফোনে কথাও হয়। এরপর থেকে তার মোবাইলটি বন্ধ থাকায় পরিবারের সাথে আর যোগাযোগ ছিল না তার। মঙ্গলবার সকালে হাওরে কাজ করতে যাওয়ার সময় তার ভাগ্নে একই গ্রামের জগদীশ দাশ পুকুর পাড়ে মামা অরুন দাশের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পান। ঘটনার আকষ্মিকতায় তিনি হত বিহব্বল হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তিনি বাড়িতে গিয়ে ২/৩ জন মুরুব্বীয়ানকে লাশের কাছে নিয়ে আসেন। তারা নিশ্চিত হন এটি জগদীশ দাশের লাশ। পরে অতিক্তি পুলিশ সুপার (বানিয়াচঙ্গ সার্কেল) শেখ মোঃ সেলিম, বানিয়াচঙ্গ থানার ওসি রঞ্জন সামন্ত, ওসি (তদন্ত) প্রজিত দাশসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের ছুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি জায়গায় রক্তের চিহ্ন দেখতে পান। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর নিহতের লাশের ময়না তদন্ত শেষে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। পরিদর্শনকালে তিনি নিহতের স্বজনদের শান্তনা দেন এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন। এছাড়াও অরুন মেম্বার নিহতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান জয় কুমার দাস, পুকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নানু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ দাশ, যুবলীগ সভাপতি আফরোজ মিয়া, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মোফাচ্ছল হোসাইনসহ এলাকার লোকজন।
নিহতের ভাতিজা অচিন্ত দাশ জানান, সোমবার সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে বানিয়াচঙ্গ থানায় যান তার কাকা অরুন দাশ। থানায় কাজ শেষ করে তিনি কবিরপুর গ্রামে তার শ^শুর বাড়িতে একটি ধর্মীয় উৎসবে যান। সন্ধ্যায় আমার কাকাতো ভাই অনন্ত দাশের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এরপর মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকার কারণে পরিবারের লোকজন তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি। মঙ্গলবার সকালে ফারুক মিয়ার পুকুর পাড়ের গাছ-গাছালির নিচে কাকার লাশ পাওয়া যায়। তিনি বলেন- তার কাকা অরুন দাশ ব্যক্তিগত জীবনে খুব ভাল মানুষ ছিলেন। পরোপকার করতেন তিনি। এলাকার মন্দির ভাঙ্গা ও মন্দিরে চুরির ঘটনা নিয়ে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। মন্দিরের পক্ষে কাকা’র অবস্থান ছিলো। কাকাকে পরিকল্পিত ভাবে ঘাতকরা হত্যা করেছে। আমরা কাকা’র হত্যার বিচার চাই।
পুকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ দাশ জানান, অরুন দাশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন। আওয়ামী লীগের সকল সভা সমাবেশে তার উপস্থিতি থাকতো সরব। তাকে যারা হত্যা করেছে সেই হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ব্যবস্থা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। পুকড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, নিহত অরুন দাশ মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জনসেবামূলক কাজ করেছেন। তার নিজ ওয়ার্ডের জনগণের যে কোন প্রয়োজনে তাদের কাছে ছুটে যেতেন তিনি। এভাবে একজন জনপ্রতিনিধিকে হত্যা করা হবে তা কখনো কল্পনা করা যায়নি। তিনি এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ সেলিম জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মনাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকান্ড।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, নিহত অরুন দাশ একজন জনপ্রিয় মেম্বার ছিলেন। পুলিশ প্রশাসনের সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। অরুন দাশ নিহতের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিবারের দাবি হত্যা ॥ নিহতের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com