নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর চর কেটে আবারও বালু ও মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় কয়েকটি প্রভাবশালী মহল। কোনো ধরণের ইজারা ছাড়াই উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে এ ঘটনা ঘটছে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এর আগে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের পর ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করলে কিছু দিন বন্ধ ছিল এই বালু ও মাটি উত্তোলন কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীঘলবাক ইউনিয়নের বুক চিড়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীতে বর্তমান সময়ে পানি না থাকায় কসবা ও চরগাঁও গ্রামে বিশাল চর জেগেছে। কয়েকমাস ধরে বিশাল স্থান নিয়ে জাগা এই চড়ে স্থানীয় ৪-৫টি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র কসবা ও চরগাঁও গ্রামের কুশিয়ারা নদীর ঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। প্রতিদিন ওই সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের ৪৫-৫০ জন শ্রমিক তারা নদীর চর কেটে ট্রাকে বালু ও মাটি তোলে দেন। বালুগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। আর মাটি বিক্রি করা হয় ভিটা বাড়ি ভরাটের জন্য। নদীর চর থেকে প্রতি ট্রাক বালুর দাম ৫শ থেকে ৬শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। আর প্রতি ট্রাক মাটি নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায়। প্রতিদিন ৭০-৮০ ট্রাক বালু মাটি করা হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর চরের বালু মাটি বিক্রি করে সংঘবদ্ধ কুচক্রী মহল লাভবান হলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় নদীর চর কাটার ফলে আগামী দিনে বন্যার কবলে দীঘলবাক এলাকার আরো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
সরেজমিনে কোদাল দিয়ে নদীর চর থেকে বালু কাটার সময় কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৬৫ বৎসরের এক বৃদ্ধ শ্রমিকের সাথে। তিনি বলেন, তোমরা কেনে আইছো কত বড় বড় রাঘব বোয়াল আইয়া অখান তাকি ফিরিয়া গেছইন। তোমরা পত্রিকাত লেখিয়া কী হইবো!। পত্রিকায় লেক্কিয়া কিচ্ছু অইতো নায়,কামকা আইছো রে বাবা যাওগি যাও।
এক পর্যায়ে প্রতিবেদক কার কার নেতৃত্বে চর থেকে বালু কাটা হচ্ছে জানতে চাইতে নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বালু কাটা বন্ধ করে শ্রমিকরা চলে যান। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে দীঘলবাক ইউনিয়নে গত বছর প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে প্রকাশ্যে এ ইউনিয়নে নদীর চর কেটে অবাধে বালু বিক্রি করা হচ্ছে এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদীমাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশ। কিছু অসাধু লোকের কারণে নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার উৎসব চলছে। কুশিয়ারা নদীর একটি অংশ নবীগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দীঘলবাক ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত। একের পর এক নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার ফলে এলাকাটি বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই দ্রুত চর কাটা বন্ধে প্রশাসন সোচ্চার হবে বলে আশাবাদী।
স্থানীয় দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা মিয়া বলেন, আমি শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এবং আগামী আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়টি তোলে ধরবো।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, যারা বালু বিক্রি করছে তাদের সবার বিরুদ্ধে শীঘ্রই নির্দিষ্ট বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।