চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন ছড়া ও নদী থেকে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের পর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পয়েন্ট তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে এসব বালু। বালু বহনকারী বেপরোয়া গতির ট্রাক্টরের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রশাসন থেকে বার বার ড্রেজার মেশিন ধ্বংস, শাস্তি ও জরিমানা করা সত্ত্বেও থেমে নেই বালু খেকোরা। ইজারার শর্তানুযায়ী ইজারাকৃত নির্দিষ্ট ঘাট ব্যতীত অন্য যে কোনো স্থানে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু উত্তোলনকৃত বালু আবার যততত্র রাস্তার পাশে ডিপো বসিয়ে লোড আনলোড করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন জনসাধারণের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে, অন্যদিকে ধুলা-বালু মানুষের গায়ে পড়ছে।
অভিযোগ উঠেছে সরকারি নিয়মনীতি না মেনে ইজারাদার নির্দিষ্ট স্থান থেকে বালু উত্তোলনের পর জনবহুল রাস্তার উপর রেখে বিক্রি করেন। উপজেলার গাজীপুর স্কুল এন্ড কলেজের সামনে, দেওরগাছ বাজারে ও পৌর শহরের খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করে রানীগাঁও সড়কের পাকুরিয়া নামক স্থানে বৈধ-অবৈধ বালু বিক্রি করা হয়। অনেক জায়গায় সরকারি ডাককৃত ঘাটে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।
সিলিকা বালি সমৃদ্ধ চুনারুঘাট উপজেলার মানচিত্র খেয়ে ফেলছে বালু খেকোরা। দীর্ঘদিন যাবৎ বালু উত্তোলনের ফলে বদলে যাচ্ছে এ উপজেলার মানচিত্র। ছোট ছোট খাল ছড়ায় রূপান্তরিত হচ্ছে। ছড়া রূপ নিচ্ছে নদীতে। নদীগুলো ভেঙ্গে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করাঙ্গী নদী একটি ছোট নদী। এই নদীর উপজেলার সাটিয়াজুরীর ইউনিয়নের কুরছিমুড়া, চান্দের টিলা, কোনাগাও থেকে প্রতিদিনই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। আর এসব বালু কোনা নামক স্থান থেকে বালু উত্তোলন করে কৃষ্ণপুর গ্রামে রাখা হয়।
বালুবাহী ট্রাক্ট্ররের চলাচলে চুনারুঘাট উপজেলার এমন কোন সড়ক নেই যেখানে অক্ষত আছে। সবগুলো সড়ক পথে বালুর গাড়ী চলাচল করার কারণে ভেঙ্গে খানা-খন্দে ভরে গেছে। নদী পাড়ের মানুষের আর্তচিৎকার কারো কানে প্রবেশ করছে না। সহায় সম্বল হারিয়ে ভুক্তভোগী মানুষজন আল্লাহর দয়ার পানে চেয়ে আছেন কেবল। কিন্তু খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা শক্তিশালী মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে দিনের পর দিন। শক্তিশালী মেশিনের টানে নির্ধারিত জমির বাইরে থেকেও বালু চলে আসে মেশিনের পাইপে। এতে করে নদী-ছড়া গভীর হয়ে পড়ে। প্রশাসন ওই প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপই নিতে না পারায় সেই লীজ হোল্ডাররা পুরো উপজেলার নদী ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে চা-বাগান ও পাহাড় ঘেরা চুনারুঘাট উপজেলার মানচিত্রকেই পাল্টে দিয়েছে।