স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৃত্যুর কারণ জানতে আদালতের নির্দেশে স্কুলছাত্রী জেরিনের লাশ আজ (বৃহস্পতিবার) কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হবিগঞ্জ সদরের এসিল্যান্ড সোহেল রানার উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের পর হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে পুনরায় দাফন করা হবে। হবিগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ-ওসি মোঃ মাসুক আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ঘাতক জাকির হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর তথ্য তুলে ধরে পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে ফেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী মদিনাতুল কোবরা জেরিনকে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দুর্ঘটনায় আহত হয় জেরিন। তাৎক্ষণিক প্রচার করা হয় টমটম থেকে নেমে ভাড়া দেয়ার সময় সিএনজি অটোরিক্সার ধাক্কায় সে আহত হয়। পরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা যায়। জেরিনের মৃত্যুর ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সিএনজি গাড়ী থেকে পড়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে ছড়িয়ে পড়ায় জেরিনের পরিবার ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ বাড়িতে এনে দাফন করে। পরে জেরিনের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে ২০ জানুয়ারি জেরিনের বাবা আব্দুল হাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে হবিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে পুলিশ বিষয়টি নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখে ঘটনার পেছনে আরো ঘটনা জানতে পারে। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা’র নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম পিপিএম, পুলিশ পরিদর্শক দৌস মোহাম্মদ, পুলিশ পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া হাসান, এসআই সাহিদ মিয়া, এসআই পলাশ চন্দ্র দাস এবং ওসিসহ পুলিশের দুইটি টিম মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রকাশ্যে ও গোপনে কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। তদন্তকালে সিএনজি গাড়ীটি সনাক্ত করে আসামী নুর আলমের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। ওসি নিজে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে নিহত জেরিনকে একই গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন (২৫) বিভিন্ন সময়ে প্রেমের প্রস্তাব দিত। জেরিন তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এবং তার পরিবারে বিচার দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি সকাল ৯টায় তার বন্ধু সিএনজি চালক নুর আলম ও হৃদয়কে নিয়ে জেরিনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে জাকির। অপহরণে ব্যর্থ হয়ে রিচি স্কুলের সামনে চলন্ত গাড়ী থেকে ধস্তাধস্তি অথবা কোন ভাবে ধাক্কার কারণে জেরিন পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। ঘটনার পর থেকে জাকির হোসেন নিজেকে আড়াল করে রাখে। তার চলাফেরা ও গতিবিধি গভীর পর্যবেক্ষনে রাখে পুলিশ। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ঘটনার আগে ও পরে তার সহযোগী সিএনজি চালক নুর আলমের সাথে বারবার যোগাযোগ হয়েছে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ২০ জানুয়ারি রাত পৌনে ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ধল এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেনকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে নিহত জেরিনের সাথে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রতিশোধ হিসেবে তার সহযোগী নুর আলম ও হৃদয়কে নিয়ে কৌশলে জেরিনকে অপহরণ করার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, জেরিন স্কুল এলাকা পার হয়ে যাওয়ার পর চলন্তÍ গাড়ী থেকে নেমে যাওয়া চেষ্টা চালায়। এ সময় তার সহযোগী জাকির ও হৃদয়ের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাদের ধাক্কার কারণে জেরিন রাস্তায় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরে জাকির হোসেনকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। জাকির হোসেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে দোষ স্বীকার করে সহযোগীদের নাম উল্লেখ করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এ প্রেক্ষিতে জেরিনের মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেরিনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হবিগঞ্জ সদরের এসিল্যান্ড সোহেল রানার উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত কাজ সম্পন্ন করে পুনরায় লাশ দাফন করা হবে।
নিহত মদিনাতুল কুবরা জেরিন (১৬) হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের আব্দুল হাই কন্যা। সে রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী হিসেবে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের পর হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে পুনরায় দাফন করা হবে
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com