এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জে বছরজুড়েই আলোচিত হয়েছে দাঙ্গা বিরোধী শ্লোগান ও পুলিশের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি। বেশ কয়েকটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে। এমনকি পুলিশের একজন কর্মকর্তার গাড়িতেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে ২ ডাকাত। গ্রেফতার হয়েছে শতাধিক। বিদায়ী বছরে জেলাজুড়ে আলোচিত হয়েছে পুলিশের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ও দাঙ্গা-সন্ত্রাস রোধে প্রচারাভিযান। ফলে এক বছরে মামলার সংখ্যা কমেছে সাড়ে ৬শ’। একই সাথে আলোচনার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছিল জেলাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, এ জেলা গ্রাম্য দাঙ্গা প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে গ্রাম্য দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগে থাকতো। অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়েই একাধিক খুন খারাবি হতো। ২/৫ টাকার জন্যও বিভিন্ন সময় বড় দাঙ্গার সৃষ্টি হতো। একাধিক লোক মারা যেতো। এ জন্য হবিগঞ্জের বেশ দুর্নামও ছিল। তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর প্রথম লক্ষ্যই ছিল এসব গ্রাম্য দাঙ্গা রোধ করতে হবে। তাই প্রথমে টার্গেটে নিয়েছি শিক্ষার্থীদের। তাদেরকে মোটিভেশন করতে পারলে সব ধরণের অপরাধের ক্ষেত্রেই ভাল ফল পাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। তারা যদি বাবা, চাচা, ভাইকে বলে তোমরা দাঙ্গায় গিয়ে দুর্ঘটনা হলে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের পরিবারের কি হবে? এসব কথায় এর প্রভাব অনেক বেশি পড়বে। তাছাড়া অপরাধের কুফল সম্পর্কে জানা থাকার কারণে তারা বড় হয়েও এসব অপরাধ থেকে বিরত থাকবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এর ফলও মিলেছে। গত এক বছরে দু’য়েকটি ছোটখাট দাঙ্গার বাইরে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। এসব দাঙ্গায় কেউ মারা যায়নি। মামলার সংখ্যাও কমেছে প্রায় সাড়ে ৬শ’। আমার বিশ^াস এ প্রক্রিয়া ধরে রাখতে পারলে এক সময় দাঙ্গার দুর্নাম গুছিয়ে হবিগঞ্জ দেশের আদর্শ জেলায় পরিণত হবে। তিনি বলেন, কিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে বন্দুকযুদ্ধে ২ ডাকাত মারা গেছে। এছাড়া শতাধিক ডাকাত গ্রেফতার হয়েছে। পরে জেলায় ডাকাতি একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, উচ্ছেদ কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলতে থাকবে। সরকারের এক ইঞ্চি জমিও কাউকে অবৈধভাবে দখলে রাখতে দেয়া হবে না। সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, হবিগঞ্জকে একটি পরিচ্ছন্ন শহরে রূপান্তরিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কিছু অবৈধ দখলদার আদালতে মামলা দিয়ে জমি দখলে রেখেছেন। মামলা নিষ্পত্তি হলেই সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাদক, দাঙ্গা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহার, বাল্য বিয়ের কুফল ও করণীয় বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা এসব অপরাধ কিভাবে সংঘটিত হয়, এর প্রভাবে কি ক্ষতি হতে পারে, এসব অপরাধ থেকে নিজেদের কিভাবে বিরত রাখবে সে সম্পর্কে জানতে পারছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার অভিযান করা হয়। শুধু তাই নয়, শীত মওসুমে পুলিশ সুপারে উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। সেখানে উপস্থিত লোকজনদের দাঙ্গা হাঙ্গামায় না জড়ানোর জন্য সচেতনতামুলক বক্তব্য প্রদান করা হয়। দাঙ্গাসহ বিভিন্ন অপরাধ দমন করার জন্য জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্বল্পদৈঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। পরিবহনগুলোতে সচেতনতা মূলক লিফলেট ও স্টিকার লাগানো হয়েছে। আর পুলিশ সুপার এ উদ্যোগ নেয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সামনে এসব অপরাধের কুফল সম্পর্কে তুলে ধরার কারণে তাদের মাঝেও সচেতনতা বাড়ছে।
জেলা পুলিশের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় বড় কোন দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। এতে একটিও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। হিসেব করার মতো মোট দাঙ্গা হয়েছে ১টি। এক বছরে খুন হয়েছেন ৬৩ জন। যার একটিও দাঙ্গায় নয়। আর আগের বছর খুন হয়েছিলেন ৮৭ জন। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ১টি। ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৯৭টি। আর নারী নির্যাতন হয়েছে ২৮৬টি। অথচ ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নারী নির্যাতন হয়েছিল ৩৭৫টি। ৮টি ডাকাতি মামলার মাঝে ২টি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এগুলো পারিবারিক ও লেনদেনের বিরোধের কারণে হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। সব মিলিয়ে এক বছরে মামলা হয়েছে ২ হাজার ২০৮টি। আর আগের বছর মামলা হয়েছিল ২ হাজার ৮১৭টি। গেল এক বছরে মামলার সংখ্যা কমেছে সাড়ে ৬শ’টি।
ফিরে দেখা-২০১৯
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com