দূর্জয় হবিগঞ্জে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ॥ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়

হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজনে হবিগঞ্জে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। হবিগঞ্জবাসী গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বিজয় দিবস উদযাপনে এবারও হবিগঞ্জে ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। এরপর দূর্জয় হবিগঞ্জে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা ও মুক্তিযোদ্ধারা। এ ছাড়াও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা দূর্জয় হবিগঞ্জে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা ও ২১শে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, হবিগঞ্জ জেলার প্রথম দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহফিল হোসেন ও হাফিজ উদ্দিন এবং মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড ইন কমান্ড মরহুম মেজর জেনারেল আব্দুর রব বীরউত্তম, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হবিগঞ্জ জেলার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মরহুম অ্যাডভোকেট মোস্তফা আলী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মরহুম কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ও মরহুম ডাঃ সামছুল হোসেন উমদা মিয়ার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ফাতেহা পাঠ করা হয়। সকাল ৮টায় জালাল স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড এবং শিশু-কিশোর সংগঠনের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা সালাম গ্রহণ করেন। পরে কুচকাওয়াজের অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও অতিথিদের সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে এনএসআই’র ডিডিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় নিমতলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুন কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক চৌধুরী। সকাল সাড়ে ১০টায় জালাল স্টেডিয়ামে বালকদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা একই সময়ে বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মহিলা ও বালিকাদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সকাল ১১টায় শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাছাড়াও হাসপাতাল, জেলাখানা, এতিমখানা ও শিশু পরিবারসমূহে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ/যুদ্ধাহত, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থণা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় জালাল স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট বনাম মুক্তিযোদ্ধা সদর ইউনিটের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসন বনাম পৌরসভা একাদশের মাঝে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সিনেমা হলে বিনা টিকিটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং উন্মুক্ত স্থানে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় নিমতলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বজনীন ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং রাত সাড়ে ৭টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।