হবিগঞ্জে ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম-পিপিএম (সেবা)। বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এসএম ফজলুল হক, কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ) মোঃ রহমত উল্ল্যাহ চৌধুরী (বিপিএম-বার), হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শহিদ উদ্দিন চৌধুরী। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ ফখরুজ্জামান, জনকন্ঠের প্রতিনিধি রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, মাছ রাঙ্গা টিভি প্রতিনিধি চৌধুরী মাসুদ আলী ফরহাদ, সময় টিভি প্রতিনিধি রাশেদ আহমদ খান, দৈনিক আজকের হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম মজিদ, জিটিভি প্রতিনিধি মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, দৈনিক সমাচারের নির্বাহী সম্পাদক দিদার এলাহী সাজু প্রমূখ।
সেমিনারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমি দায়িত্ব দেয়ার পূর্বে হবিগঞ্জে ২ হাজার ৭শ’ মামলা ছিল। যোগদানের পর তা কমে ২ হাজার ১শ’ হয়েছে। অর্থাৎ ৬শ’টি মামলা কমে গেছে। তিনি বলেন, গ্রাম্য দাঙ্গাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। হবিগঞ্জকে শান্ত রাখতে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। হবিগঞ্জে এক সময় জঙ্গিদের তৎপরতা ছিল। এখানে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র প্রধান সাইদুর রহমানে বাড়ি। হবিগঞ্জের কোথাও জঙ্গি তৎপরতা থাকলে সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে তা তুলে ধরতে হবে। বাঙ্গালি সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ লালন করতে হবে। সাথে দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে হবে এবং জঙ্গিদেরকে বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। জঙ্গি ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে গণমাধ্যম কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার কারণে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে মানুষ সচেতন হচ্ছে। উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সচেতনা বৃদ্ধি করতে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। সভায় কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ) মোঃ রহমত উল্ল্যাহ চৌধুরী (বিপিএম-বার) বলেন, হলি আর্টিজানে হামলায় নিহত জঙ্গিদের লাশ তার স্বজনরা এসে নিয়ে যায়নি। লাশ যখন হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছে, তখন আমরা গণ্যমাধ্যম কর্মীদের সাথে পরামর্শ করি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়, জঙ্গিদের লাশ স্বজনরা নিতে চাচ্ছেন না। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় পর মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। শুধু তাই নয়, হলি আর্টিজানের ঘটনার সময় আমরা গণমাধ্যমগুলোর লাইভ সম্প্রচার থেকে অনেক তথ্য জেনেছি। গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের কতিপয় দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি বহুল আলোচিত বিষয়। পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের কারণে হোক কিংবা অন্য কোন কারণে হোক যারাই এই পথে পা বাড়িয়েছে তারা জঘন্যতম অপরাধে জড়িত হচ্ছে। ধর্মীয় কারণে কিংবা রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে হামলা, অতর্কিত আক্রমণ, হত্যা করা, আত্মঘাতী হামলা কিংবা নিজস্ব মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করার নাম হচ্ছে জঙ্গিবাদ। আর সন্ত্রাসবাদ হল রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য হত্যা, অত্যাচার ইত্যাদি। একটি কুচক্রিমহল বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে মোটেই সহ্য করতে পারছে না। তাই তারা বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারা বিনষ্ট করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাস কবলিত মৌলবাদী জঙ্গি রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে। এজন্য তারা ইসলামের নামধারী কয়েকটি সংগঠনকে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে তিনটি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এদের কেউ কেউ আবার আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গিবাদকে রুখতে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। জঙ্গিদের একটা বড় অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খুব জোড়ালোভাবে এগুলো মনিটরিং করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জঙ্গিবাদ রুখতে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন জোরালো ভূমিকা রাখলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।