সাংবাদিকদের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের আবালবৃদ্ধবণিতা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। ওই সময়ে পাকিস্তানীদের দ্বারা এদেশের লাখো মা বোন ধর্ষিতা হয়েছেন, নির্যাতিতা হয়েছেন। রাজাকার আলবদর এ দেশীয় দোসররা তাদের সহযোগিতা করেছে। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু ১৯৭১ সাথে যারা আমাদের মা বোনদের ধর্ষণে সহযোগিতা করেছে তারা এখনো রয়ে গেছে আড়ালে। আমাদেরকে এসব অপরাধীদের খুঁেজ বের করতে হবে। তাদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পত্র পত্রিকায় তুলে ধরতে হবে। তিনি অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত ফলাও করে মিডিয়ায় তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে অসুস্থ, অস্বচ্ছল ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হতাহত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নকাজ শুরু হলেই আন্দোলন কেন এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে যেটা লক্ষ্যনীয়, যখন উন্নয়নের কোনো কাজ দেয়া হয়, যখনই সেখানে একটা প্রজেক্ট দেয়া হয়, তখনই এই আন্দোলন যেন আরও ঘনীভূত হয়ে উঠে। কেন? তাহলে যারা আন্দোলন করেন তাদেরও ভাগ-বাটোয়ারার ব্যাপার আছে, নাকি ভাগে কম পড়ছে, আমার প্রশ্ন সেখানেও আছে। আমি জানি আমি খুব রূঢ় হচ্ছি কিন্তু বাস্তবে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটা কি ধরনের কথা? হয়ত প্রজেক্ট পাস হয়ে গেছে টাকাও ছাড় হয়নি। তার আগেই দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলন, কি কারণে? কার ভাগে কম পড়ল যে এই আন্দোলন? আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এভাবে ছেলে মেয়েদের জীবন নষ্ট করার কি অধিকার আছে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে, যদি অভিযোগ থাকে বলুক আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। কিন্তু যেখানে আমরা একজনকে ভিসি বানালাম তার বিরুদ্ধে আন্দোলন। আর এর মধ্যে শিক্ষকও জড়িত। শিক্ষকরা ছাত্রদের ব্যবহার করে। এটা কোন ধরনের কথা? এখানে কি কোনো ডিসিপ্লিন থাকবে না? কোনো আইন থাকবে না? আইন প্রয়োগ হবে না? আর আমাদের কেউ কেউ আছে এটাকে আরও উস্কানি দেয়। এই বিষয়গুলো মনে হয় একটু দেখা দরকার আপনাদের। তিনি বলেন, আমি হঠাৎ দেখছি কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা নাই, বার্তা নাই ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন। ভিসিকে দুর্নীতিবাজ বলছে। আমার স্পষ্ট কথা যারা দুর্নীতির অভিযোগ আনছে তাদেরকে কিন্তু এই অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে এবং তাদেরকে তথ্য দিতে হবে। তারা যদি তথ্য দিতে পারে নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারবে না। ওই দুর্নীতি দুর্নীতি করে ক্লাসের সময় নষ্ট করবে। ক্লাস চলতে দেবে না, ইউনিভার্সিটি চলতে দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুখে বললে তো আর হবে না। সুনির্দিষ্টভাবে সে জানে বলেই তো অভিযোগ করেছে। সুনির্দিষ্টভাবে যখন জানে তখন সে অভিযোগটা বলবে না কেন বা প্রমাণ দেবে না কেন? আর প্রমাণ যদি না দিতে পারে তাহলে যে মিথ্যা অভিযোগ করবে তার শাস্তি হবে। সেটা আপনাদের জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা কিন্তু এটা করব।
আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, অফিসে আক্রমণ, ভাংচুর নানা ধরনের। এটাও তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। ছাত্র-শিক্ষকরা এই ধরনের কর্মকান্ড কেন ঘটাবে এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তারা ক্লাস কেন বন্ধ করবে? প্রত্যেকটা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে কয় টাকা তারা খরচ করে তাদের পড়ার জন্য? খরচ তো সরকারের পক্ষ থেকে করি। স্বায়ত্ত্বশাসন তাদের আছে। স্বায়ত্ত্বশাসিত হলে তো তাদের নিজেদের অর্থের জোগান দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানোর কথা। কিন্তু প্রতি বছর বাজেটে আমরা টাকা দেই। বাজেটে আমরা টাকা দেব আর সরকার সেখানে কিছুই করতে পারবে না, আর এভাবে দিনের পর দিন তারা ক্লাস বন্ধ করে থাকবে এটা হয় না। আবরার ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের পরও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়েও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বুয়েটের সমস্যাটা কি সেটা তো বুঝতে পারছি না। আমরা তো সবই করলাম। তারপরও এই আন্দোলন কিসের জন্য? বুয়েটে যে আবরার হত্যা ঘটল, আমরা সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাসহ সকল আইনী প্রক্রিয়া যখন চলমান, ঠিক তখনই ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। ছাত্ররা আন্দোলনের আগেই যখনই খবর এসেছে তখনই কিন্তু আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। এখন তাহলে আন্দোলন কিসের জন্য, আমার সেটাই প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় রাজধানীর একটি স্কুলে প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলো আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আয়োজকদের অবহেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ও কলেজের ছাত্র আবরারের মৃত্যুর নিন্দা জানান। তিনি বলেন, তারা কিভাবে এ ধরনের অবহেলা করতে পারে। স্কুল শিক্ষার্থীরা যেখানে ঘোরাফেরা করছে সেখানে এই ধরণের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে তাদের কোন দায়িত্বশীলতা ছিল না। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ, এটি সহ্য করা যায় না। অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স এবং ট্রমা সেন্টারের মতো হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও ছাত্রটিকে মহাখালিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন।
নুসরাত হত্যাকান্ড সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিডিয়া সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরায় অপরাধিদের সনাক্ত ও দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এজন্য তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মোঃ নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মোঃ নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে), সভাপতি মোল্লা জালাল এবং সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে), সভাপতি আবু জাফর সূর্য এবং সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিটিভি’র মহাপরিচালক এসএম হারুনুর রশিদ, পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ প্রমূখ।