প্রতি ঃ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগ, হবিগঞ্জ সদর, জেলা- হবিগঞ্জ।
প্রেরক ঃ মোঃ ছালেক মিয়া, সভাপতি, পৌর আওয়ামী লীগ, শায়েস্তাগঞ্জ, জেলা- হবিগঞ্জ।
বিষয় ঃ শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হইতে অব্যাহতি এবং কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব প্রদান প্রসংগে। বিগত ২৫/০৬/২০১৯ ইং তারিখে উপরোক্ত বিষয় উল্লেখ করে একটি পত্র জারী হলে তাহা অদ্য ৩০/০৬/২০১৯ইং তারিখে আমি গ্রহণ করি। পত্র পাঠ করে তাহার ব্যাখ্যা নিম্নে উপস্থাপন করিলাম।
গত ১৮/০৬/২০১৯ইং তারিখে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জনাব আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে, আমার সভাপতিত্বে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের পর পর কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দুইটি সভায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় পৌর আওয়ামী লীগ এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সকল নের্তৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা থেকে চেয়ারম্যান পদে জনাব আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেরা সুলতানা-কে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার জন্য এবং নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন দেওয়া হয়।
হবিগঞ্জ পৌরসভা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আলহাজ¦ এডঃ মোঃ আবু জাহির এমপি মহোদয় এর সভাপতিত্বে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ৩৬টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদকসহ ইউনিয়ন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সমম্বয়ে দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করার লক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত সভায় আমি মোঃ ছালেক মিয়া, শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে পৌর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের আলোকে জনাব আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল-কে আওয়ামী লীগের দলীয় একক প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করি। ঐ সভায় সকল নেতা-কর্মীরা আমার প্রস্তাবের স্বপক্ষে হাত তুলেন ও সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য যে, ঐ সভাতেই শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাবা সাবেরা সুলতানা-কে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বদরুল আলম দিপন-কে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সমর্থন প্রদান করা হয়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক প্রার্থীগণকে দলীয় ভাবে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এর পর পরই সকল প্রার্থীগণ নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ভাবে নির্দেশনা আসে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতিক দেওয়া হবে না এবং উন্মুক্তভাবে নির্বাচন করার জন্য। তারপর শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে কলোনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জনাব আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি মহোদয়। সকল নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি জনাব আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি মহোদয়ের বক্তব্যে জনাব আব্দুল রশিদ তালুকদার ইকবাল-কে নৌকা প্রতিকে ভোট দেওয়ার জন্য এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে জনাবা সাবেরা সুলতানা-কে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বদরুল আলম দিপন-কে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট প্রদানের জন্য এবং কাজ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
আমি বরাবরই জনাব আব্দুল রশিদ তালুকদার ইকবাল সাহেবকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাকে সাথে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে সুসংগঠিত করে বিগত দুইটি সংসদ নির্বাচনে আমরা অত্যন্ত সফলতার সহিত কাজ করেছি। দলে ঐক্য ছিল, দলে শৃংখলা ছিল। এখানে আরোও উল্লেখ্য যে, বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার উদ্যোগের ফলে জনাব আব্দুল রশিদ তালুকদার ইকবাল সাহেব জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনাব আব্দুল রশিদ তালুকদার ইকবাল একটি সম্মানজনক অবস্থান থেকে দল ও দেশের জন্য কাজ করেন আমি সব সময়ই এই কামনা করে আসছি। নবসৃষ্ট শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনেও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি মহোদয়ের নির্দেশে আমি উনার স্বপক্ষে আমার সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে তিনি যাতে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন এই লক্ষে আমি কাজ করেছি।
আমি নৌকার পক্ষে না বিপক্ষে ছিলাম সেটা নৌকার প্রার্থী নবনির্বাচিত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল রশিদ তালুকদার ইকবাল সাহেবই ভাল করে জানেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি মহোদয়সহ উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের দলীয় চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্য, পৌরসভার কাউন্সিলরগণ (১/২ জন বাদে), সমস্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই বিষয়ে ভাল ভাবে অবগত রয়েছেন। অতএব আমি নৌকার পক্ষে ছিলাম, নৌকার বিরুদ্ধে যায় এমন কোন কর্মকান্ডে আমার জানামতে বিন্দুমাত্রও জড়িত ছিলাম না।
আমার বিরুদ্ধে আনিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার জবাবে আমার বক্তব্য হচ্ছে এই, আমাকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে এই নোটিশেই উল্লেখ রয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে ২/১টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এই প্রেক্ষিতে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট হিসাবে আমি তার পরাজিত হবার কারণগুলি তার পক্ষ থেকে উপস্থাপন করেছি। এখানে আমি নৌকার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিপক্ষে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন কথা বলিনি।
আমি জন্মসূত্রে আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমি শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা কমিটির প্রচার সম্পাদক, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের হবিগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক, জাতীয় শ্রমিক লীগ হবিগঞ্জ জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ছিলাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে গোপন ভোটের মাধ্যমে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলাম।
আরোও উল্লেখ্য যে, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিগত শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন তারা সকলে মিলে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। যার ফলে শায়েস্তাগঞ্জে আওয়ামী লীগ সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শায়েস্তাগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা করে দিয়েছেন। এই উপজেলার অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ উপজেলার সকল সুযোগ সুবিধা জনগনের কাছে পৌঁছে দিতে হলে শায়েস্তাগঞ্জে একটি শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন।
অতএব কারণ দর্শানোর নোটিশে যে সমস্ত কারণ উল্লেখ করে আমাকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অবাহতি প্রদান করা হয়েছে, তা হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী পরিবারের কোন নেতা বা কর্মীর কাছ থেকে এই ধরণের ঘটনা ঘটবে তাহা কোন দিনও প্রত্যাশা করি নাই। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয় কর্তৃক ১লা মার্চ/২০১৭ইং তারিখে স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নিদের্শনা রয়েছে যে, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত ব্যতীত কোন কমিটি ভাংগা বা বিলুপ্ত না করার জন্য।
উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আমাকে পুনঃ বহাল ও কারন দর্শানোর নোটিশের দায় হতে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
ধন্যবাদান্তে
তারিখ ঃ
(মোঃ ছালেক মিয়া)
সংযুক্তঃ
০১। উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে প্রেরিত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের তালিকার কপি।
০২। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয় কর্তৃক ১লা মার্চ/২০১৭ইং তারিখের স্বাক্ষরিত পত্রের কপি।