এমন যদি হত মৃত্যুর পর আবার পুনর্জন্মের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করা হত তুমি এখন কি হতে চাও, আমি নির্দ্বিধায় উচ্চ কন্ঠে চিৎকার করে বলতাম আবার আমি ডাক্তারই হব

ডা. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব

এমন যদি হত মৃত্যুর পর আবার পুনর্জন্মের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করা হত তুমি এখন কি হতে চাও, আমি নির্দ্বিধায় উচ্চ কন্ঠে চিৎকার করে বলতাম আবার আমি ডাক্তারই হব।
আমার ডাক্তার বন্ধুগণ শুনে চোখ চড়কগাছ করে উষ্মার সাথে এটাই বলবে আহাম্মক নাকি, মাথায় ঘিলু আছে? এখনো শিক্ষা হয়নি? এটা বলে কি??
বন্ধুদের বলার কারণ অনেক….
এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে এমবিবিএস সবচেয়ে কঠিন কোর্স। এঁরহহবংং নড়ড়শ ড়ভ ড়িৎষফ তাই বলে। অতঃপর ঢ়ড়ংঃ মৎধফঁধঃরড়হ তো রয়েছেই। কত হাজার ঘন্টা যে পড়তে হয়েছে হিসেব রাখার সুযোগ হয়নি।
পুরোনো এমন কোন মেডিক্যাল বাদ নেই যেখানে দু’এক জন পড়াশোনার চাপে ভারসাম্যহীন হয়ে আত্মহত্যা করেনি বা কোর্স ছেড়ে পলায়ন করেনি। মেডিক্যালে পড়ার সময় সবাই একবার কসম খেয়েছেন আত্মীয় স্বজন বা সন্তানাদি কাউকে আর কোনদিন মেডিক্যালে ভর্তির পরামর্শ দিবেন না।
পাশ করার পর সংসারের টানাপোড়েন প্রথম প্রথম কতটুকু যে কষ্টকর!
তুলনামূলকভাবে হাতে ছড়ি ঘুরানো ক্যাডারদের দাপটটা যে কেমন!
সরকারি সুযোগ সুবিধা এবং সহযোগিতা কতটুকু ফেভারে।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন লাভের প্রানান্তকর চেষ্টা কতটা হতাশাযুক্ত।
ধনকুবের হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই, একটা স্বচ্ছল স্বাভাবিক জীবনমান ছাড়া।
বেতন স্কেলের চুড়ায় আরোহণ করার আদৌ কোন সম্ভাবনা নেই।
রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করার পরও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিদান হল নিমকহারামি, তিরস্কার, প্রতিহিংসা আর মাঝে মাঝে দুর্ব্যবহার।
পারিবারিক ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা (এমনকি ছুটির দিনেও) সব সময় সম্ভব হয়ে উঠে না।
বিভিন্ন সরকারি আচার অনুষ্ঠানে পেছনে অবস্থান, বড়জোর তিন নম্বর চেয়ার।
গায়ে সবসময় সাদা এপ্রোন, একটু সামান্য ভুলত্রুটি হলেই কালো দাগ সবার নজরে পড়ে।
জীবনকে ভোগ করার ফুরসত বড়ই অপ্রতুল। তৎসঙ্গে গিন্নীর অফুরন্ত অভিযোগ, অনুযোগ।
তারপরও তারপরও পরজনমে সুযোগ থাকলে আমি বড় গলায় আওয়াজ দিতাম যে আমি ডাক্তারই হব।
কারণ ও অনেক………
সৃষ্টিকর্তা সকলকে এ মেধা এবং যোগ্যতা দান করেননি।
সৃষ্টির রহস্য এত ঘনিষ্ঠভাবে উপভোগ করার সুযোগ আর কারো নেই।
কসম খাওয়ার পরও পরবর্তীতে ডাক্তার বন্ধুগন নিজ সন্তান ও ঘনিষ্ঠজনদের ডাক্তারি পড়তেই উৎসাহিত করেন।
হাতে ছড়ি ঘুরানো বন্ধুদের দাপটটা যে একটা ‘ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স’ তা বুঝা যায় যখন তাদেরই সন্তানাদি মেডিক্যালে চান্স পেলে উৎফুল্ল হন।
জীবনে প্রাচুর্য না থাকলেও স্বচ্ছলতার ঘাটতি কম। দূর্নীতি অবলম্বন না করেও সুন্দর জীবন প্রবাহ সম্ভব।
বেতন স্কেলের তুঙ্গে উঠার প্রয়োজন নেই, প্রতিদিনই অল্প বিস্তর বেতন প্রাপ্তির সুযোগ আছে।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে এখনো সম্মানের পাল্লা যথেষ্ট ভারি।
সরকারি সুযোগ সুবিধার উপর ততটা নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। সবাই মোটামুটি একটা বাড়ি/বাহন ভোগ করতে পারেন।
সাধারণ এবং সরল মানুষদের ঘনিষ্ট হওয়ার এটাই মোক্ষম পন্থা।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার পর এর আস্বাদন অমৃতসম।
নিজ পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের উপকারে আসার এটাই উত্তম মাধ্যম।
হাতের ছুরিটার সবচেয়ে নিরাপদ ব্যবহার কেবল ডাক্তার হলেই সম্ভব।
গায়ে একটা সাদা এপ্রোন, এটাতো অহংকার।
সন্তানাদির নিকট এখনো বাবা (ডাক্তার) উত্তম আদর্শ।
আর জীবনে এতটা ফুরসতের প্রয়োজন কি? জীবনতো একবার। সুতরাং গতিতেই জীবন মম।
সুস্থ হয়ে উঠা শিশুর মায়ের কৃতজ্ঞ অভিব্যক্তি, চিকিৎসাত্তোর বৃদ্ধার স্নেহমেশানো হাত বুলানো, কিশোর, যুবা এবং প্রৌঢদের সরল সহাস্য অভিনন্দন, আত্মীয় অনাত্মীয়ের নানাবিধ আন্তরিক উপঢৌকন এসবতো অন্য প্রফেশনে এতটা সম্ভব নয়!
আমি আমার অতীতকে নিয়ে যারপরনাই পরিতৃপ্ত, প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট।
এক ডাক্তার কন্যার পিতা হিসেবে আমি অবশ্যই গর্বিত।
বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা পীট ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া আর একজন সন্তানের গর্বিত পিতা হিসেবে আমি সৃষ্টিকর্তার নিকট চিরকৃতজ্ঞ।
তাই সুযোগ থাকলে আমি বারবার বলতাম পর জনমে আমি আবারো ডাক্তারই হব।