মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল
এম.এ.এলএল.বি. অ্যাডভোকেট
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব
সংবাদপত্র জনগণের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণে সর্বদা দায়িত্বশীল অভিভাবক। জাতির আশা-আকাক্সক্ষা, সুখ-দুঃখের প্রতিফলন ঘটে একমাত্র সংবাদপত্রেই। রাষ্ট্র পরিচালনা, জনমত সৃষ্টি, সামাজিক বিকাশ ও সমৃদ্ধি অর্জনে সংবাদপত্র একটি কার্যকরী উত্তম মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংবাদপত্র শিল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়। নব্বইয়ের দশকে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো রঙিন পাতায় সমৃদ্ধ হয়ে প্রকাশিত হতে থাকে। ২০০০ সালে দেশে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জোয়ার আসে। একই সাথে সংবাদপত্র শিল্পও ইন্টারনেট/ ওয়েবসাইট ব্যবহারের মাধ্যমে আরো এগিয়ে যায়। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে পত্র পত্রিকার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। সাংবাদিকদের সংখ্যাও ছিল নগন্য। কেবলমাত্র কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকার মহকুমা প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ সংবাদ মাধ্যমে এলাকার সমস্যা-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতেন।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জে স্থানীয় কোন সংবাদপত্র ছিল না। ১৯৮২ সালে মোহাম্মদ শাবান মিয়ার সম্পাদনায় প্রথমবারের মত প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক স্বাধিকার। পরবর্তীতে নোমান চৌধুরীর সম্পাদনায় ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক দৃষ্টিকোণ। পরে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক প্রভাকর। মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে পত্রিকাটি সম্পাদনা করছেন মোঃ আব্দুল হালিম। সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন মামুনের সম্পাদনায় ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক তরফ দর্পণ, মোঃ ইসমাইল হোসেনের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক স্বদেশ বার্তা (১৯৮৪), শামীম আহছানের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক খোয়াই (১৯৯১), গোলাম মোস্তফা রফিকের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক হবিগঞ্জ সমাচার (১৯৯১), ফারুক উদ্দিন চৌধুরীর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক তরফ বার্তা (১৯৯৫), হাবিবুর রহমান শাহিনের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক হবিগঞ্জ পরিক্রমা (১৯৯৭), এ এইচ এম ইকবাল আহমেদ হাসনু’র সম্পাদনায় সাপ্তাহিক লোকালয় বার্তা (২০০১) ও ২০০৫ সালে দৈনিক লোকালয় বার্তা, মোঃ আমীর হোসেনের সম্পাদনায় দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস (২০০২) প্রকাশিত হয়। পরে পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন চিন্ময় আচার্য্য। বর্তমানে পত্রিকাটি হবিগঞ্জের জনতার এক্সপ্রেস নামে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে সম্পাদনা করছেন মোঃ ফজলুর রহমান। মোঃ আলমগীর খানের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক হবিগঞ্জের আলো (২০০৪) ও দৈনিক দেশজমিন (২০০৬), আজিজুল হাসান চৌধুরী শাহিনের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক অনল বার্তা (২০০৬) প্রকাশিত হয়। গত ৩৭ বছরে হবিগঞ্জ থেকে বেশ কিছু সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে নানা কারণে কয়েকটি পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। আবার কয়েকটি পত্রিকা বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। উল্লেখিত সংবাদপত্রগুলোই কালক্রমে স্বনামে কিংবা ভিন্ন নামে দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলোর মালিক সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকা প্রশংসনীয়।
হবিগঞ্জে সংবাদপত্রের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। বর্তমানে হবিগঞ্জ থেকে ১৫টি দৈনিক পত্রিকা এবং ৪টি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রকাশকাল এবং সম্পাদকগণ হচ্ছেন- দৈনিক প্রতিদিনের বাণী- ১৯৯৭ইং- চিন্ময় আচার্য্য। কিছুদিন পরই মোহাম্মদ শাবান মিয়া সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তীতে নোমান চৌধুরীর সম্পাদনায় ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় দৈনিক প্রভাকর। মালিকানা হস্থান্তর হওয়ায় বর্তমানে এর সম্পাদনা করছেন মোঃ আব্দুল হালিম। গোলাম মোস্তফা রফিকের সম্পাদনায় ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার, বর্তমানে হবিগঞ্জ সমাচারের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন রাসেল চৌধুরী। আলহাজ্ব জি কে গউছের সম্পাদনায় ২০০৪ সালে দৈনিক আজকের হবিগঞ্জ, আলহাজ্ব শামীম আহছানের সম্পাদনায় ২০০৫ সালে দৈনিক খোয়াই, ফখরুল ইসলাম চৌধুরীর সম্পাদনায় ২০০৮ সালে নবীগঞ্জ থেকে দৈনিক বিবিয়ানা, মোঃ শরীফ উদ্দিনের সম্পাদনায় ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় দৈনিক লোকালয় বার্তা। বর্তমানে লোকালয় বার্তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ এমদাদুল ইসলাম সোহেল। রাশেদ আহমদ খানের সম্পাদনায় ২০১১ সালে দৈনিক আয়না, ফারুক উদ্দিন চৌধুরীর সম্পাদনায় ২০১২ সালে দৈনিক তরফবার্তা, বর্তমানে মালিকানা হস্থান্তরিত হওয়ার পর সম্পাদনা করছেন মাহবুবুর রহমান আউয়াল। মোঃ ইসমাইল হোসেনের সম্পাদনায় ২০১৩ সালে দৈনিক স্বদেশ বার্তা, মোঃ ফজলুর রহমানের সম্পাদনায় ২০১৩ সালে দৈনিক হবিগঞ্জের জনতার এক্সপ্রেস, মোঃ আলমগীর খানের সম্পাদনায় ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় দৈনিক দেশজমিন। একই বছর আনিসুর রহমান আদিলের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বিজয়ের প্রতিধ্বনি। বর্তমানে পত্রিকার মালিকানা পরিবর্তিত হওয়ার পর এর সম্পাদনা করছেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী রতন। ২০১৪ সালে নবীগঞ্জ থেকে প্রকাশিত হয় মোঃ আলাউদ্দিনের সম্পাদনায় দৈনিক হবিগঞ্জ সময়। মোঃ আবুল লেইছের সম্পাদনায় ২০১৫ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে দৈনিক হবিগঞ্জের জননী। ২০১৬ সালে জিয়া উদ্দিন দুলালের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক হবিগঞ্জের বাণী।
শাহ মোঃ হুমায়ুন কবিরের সম্পাদনায় ২০০৬ সালে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সাপ্তাহিক হবিগঞ্জের খবর, কামরুল ইসলামের সম্পাদনায় ২০১২ সালে চুনারুঘাট থেকে সাপ্তাহিক প্রথম সেবা, চৌধুরী মোঃ ফরহাদের সম্পাদনায় ২০১২ সালে সাপ্তাহিক হবিগঞ্জ, সোহেল আহমদের সম্পাদনায় ২০১৩ সালে বাহুবল থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক হবিগঞ্জ সংবাদ। ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় রাশেদ আহমদ খানের সম্পাদনায় দৈনিক হবিগঞ্জের আয়না। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ। পত্রিকাটির সম্পাদনা করছেন হারুনুর রশিদ চৌধুরী। এছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা। বর্তমানে কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে না।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন স্বাধীনতা পরবর্তীকালে হবিগঞ্জে সংবাদপত্রের বিকাশে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের অবদানও কম নয়। স্থানীয়ভাবে সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও এই পেশার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব কমিটি গঠিত হয়। নানা প্রতিকুলতাকে মোকাবেলা করে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সভাপতি ছিলাম আমি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোঃ আমির হোসেন। ১৯৭৪ সালে জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর হবিগঞ্জ সফরকালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের সাথে তিনি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পুরাতন সার্কিট হাউজ ভবনের সামনে গ্রুপ ছবি তোলেন। এ সময় আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী মোঃ আমির হোসেন, সদস্য নোমান চৌধুরী, দেওয়ান গোলাম রব্বানী চৌধুরী কামাল পরবর্তীতে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, তবারক আলী লস্কর সাবেক ব্যাংকার প্রমূখ। ২৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাতা কমিটির তত্ত্বাবধায়নে ১৯৭৫ সালের ৪ জুলাই প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক কাজী মোঃ আবু বকর সিদ্দিকী। ১৯৭৭ সালের ১৩ এপ্রিল নবনির্মিত প্রেসক্লাব ভবন উদ্বোধন করেন মহকুমা প্রশাসক এম এস মোল্লা। বৃহত্তর সিলেটের প্রেসক্লাবগুলোর মধ্যে এটিই ছিল প্রথম নিজস্ব ভবন। পরবর্তীতে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান প্রদত্ত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে প্রেসক্লাবের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এসময় ক্লাবের সভাপতি ছিলাম আমি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোঃ ইসমাইল হোসেন। ১৯৯৫ সনের ৬ জানুয়ারি প্রেসক্লাব বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। ২০০০-২০০১ সালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান নতুন ভবন নির্মিত হয়। এসময়ও আমি প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং মোঃ ফজলুর রহমান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আল্লাহতায়লার অশেষ মেহেরবানী হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়েই আমি ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছি। উল্লেখ্য ২০০০-২০০১ সময়ে হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ায় নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত হয়। ৮০’র দশকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ছিল জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের অন্যতম মিলন কেন্দ্র। এই ক্লাবের সদস্যরাই পরবর্তীতে হবিগঞ্জে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্ববর্তী হবিগঞ্জে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ১৩১৬ বাংলা সনে নগেন্দ্র নাথ দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘মাসিক মৈত্রী’ নামের প্রথম সংবাদপত্র। কিছুদিন পরই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। একই বছর মহেন্দ্র নাথ দে’র সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ২য় সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক প্রজাশক্তি’। ১৯২২ সালে সতীন্দ্র নাথ দেবের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক কালবৈশাখী’। প্রায় একদশক এই পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত ছিল। এছাড়া ১৩২৯ বাংলা সনে যোগেন্দ্র চন্দ্র দেবের সম্পাদনায় শায়েস্তাগঞ্জের চরহামুয়া থেকে ‘শ্রী শ্রী সোনার গৌরাঙ্গ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের হয়। ১৯ বছর এর প্রকাশনা চলে। ১৩৩৩ বাংলা সনে ‘মাসিক কমলা’ নামে আরেকটি পত্রিকা বের হলেও কিছুদিন পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩২ সালে হরনারায়ন সেনের সম্পাদনায় প্রগতিশীল পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক মুক্তি’ এবং ৩০ ও ৪০ দশকে সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সম্পাদনায় ‘মাসিক বোধন’, উদয় চন্দ্র রায়ের সম্পাদনায় ‘মাসিক উদয়কাল’, দিগেন্দ্র নাথ মজুমদারের সম্পাদনায় ১৩৩৬ বাংলা সনে সুঘর থেকে ‘মাসিক স্বাধিস্তান’, অনীল কুমার রায়ের সম্পাদনায় ১৯৩৮ সালে বের হয় ‘সাপ্তাহিক সারথি’ ব্রজেন্দ্র লাল রায়ের সম্পাদনায় ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক জনমত’। পরে এর সম্পাদনা করেন রজনী রঞ্জন দত্ত ও রনজিত নাগ। সুবোধ কুমার রায়ের সম্পাদনায় বের হওয়া ‘পাক্ষিক পল্লী বাণী’এর কথা উল্লেখযোগ্য। এক দশকেরও বেশী সময় পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত থাকে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে হবিগঞ্জ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। ১৯৪৮ সালে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সম্পাদনায় ‘সাপ্তাহিক শহীদ’ ও ১৯৫৫ সালে মুহিবুল হাসানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘জাগরণ’। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘মাসিক অভিযাত্রিক’। সম্পাদনা করেন যথাক্রমে অধ্যাপক মোঃ বশিরুল হক, আবু আব্দিল্লাহ মোঃ ইসমাইল ও মোঃ মনসুর খান। বর্তমানে হবিগঞ্জে সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বার্তা সংস্থা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত একদল সাংবাদকর্মী।
সমস্যা ঃ বর্তমানে হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার অধিকাংশগুলোতেই দক্ষ সংবাদকর্মীর অভাব রয়েছে। উপজেলা সদর বা গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে প্রেরিত যে সকল সংবাদ এখানকার সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় তার অনেকটাই অভিন্ন এবং একঘেয়ে বলে মনে করা হয়। কোন কোন পত্রিকায় অতিমাত্রায় ইন্টারনেট নির্ভরশীলতার কারণে গতানুগতিকতার বাইরে নতুনত্ব বা সৃষ্টিশীল সংবাদের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে অনেক সময় যতœশীল না হওয়ায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তির আধিক্য দেখা যায়। অনেক সময় ফরমায়েশী ও স্ক্যান্ডাল নিউজ এবং কিছু সংখ্যক হারবাল চিকিৎসকের রুচিবহির্ভূত বিজ্ঞাপন পাঠকদেরকে বিব্রত করে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কোন কোন পত্রিকা দায়িত্বপালনকারী সংবাদকর্মী বা অন্যান্য বিভাগে কর্মরত স্টাফকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে পারেন না। পাঠকদের অভিমত, স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে আকর্ষণীয় ফিচার, এক্সক্লুসিভ, অনুসন্ধানী রিপোর্ট, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিবেশন না করায় পাঠকের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
সম্ভাবনা ঃ গত ৩৭ বছরে হবিগঞ্জ থেকে সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের সুফল হিসাবে জেলার সর্বত্র বিপুল সংখ্যক পাঠক সৃষ্টি হয়েছে। এখানে জাতীয় পত্রিকা পৌঁছার পূর্বেই ট্যাবলয়েড সাইজের স্থানীয় পত্রিকাগুলো জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর নিয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছে যায়। কোন কোন সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের কারণে প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী হবিগঞ্জবাসী নিজ এলাকার সংবাদ অনায়াসে অবহিত হন। স্থানীয় সংবাদপত্র বিক্রি করে শতাধিক হকার জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদের অধিকাংশই সুবিধা বঞ্চিত কিশোর। লাভজনক হওয়ায় কয়েকটি সংবাদপত্র তাদের সংবাদকর্মী ও কর্মচারীদেরকে পারিশ্রমিক দিতে পারছে। এতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তরুণদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোকে ঘিরে একদল উদ্যোমী তরুণ সংবাদকর্মীর পদচারণায় এ অঙ্গণ এখন মুখরিত। এ ঢেউ লেগেছে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। বর্তমানে অনিয়মিত হলেও হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে ২টি দৈনিক ও ৩টি সাপ্তাহিক জেলা সদরের বাইরে উপজেলা সদর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে পাওয়া অনেক বিজ্ঞাপন পত্রিকাগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এখানকার পরিশ্রমী ও সাহসী সাংবাদিকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই অধিকাংশ সংবাদপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আধুনিক মুদ্রণ ব্যবস্থার যথার্থ ব্যবহার করে হবিগঞ্জ থেকে রঙিন ও বড় সাইজের সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে বলে পাঠকগণ আশা করেন।
সাংবাদিকতা একটি মহান ও চ্যালেঞ্জিং পেশা। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মর্যাদা রক্ষায় হবিগঞ্জের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকগণ তাদের দায়িত্ব পালনে নিজেদেরকে সদা নিয়োজিত রাখবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বদলে গেছে হবিগঞ্জ
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com