পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ন্যায্যমূল্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে

এসএম সুরুজ আলী ॥ ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধের খবরে সারা দেশের ন্যায় হবিগঞ্জে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিল ৫৮-৬০ টাকা। রবিবার সেই পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে গিয়ে প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা ও রাতে ১শ’ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১শ’ থেকে ১১০ টাকা কেজি। এ হিসেবে গড়ে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৪৫-৫০ টাকা। বাজারে পেঁয়াজ ক্রয় করতে গিয়ে দাম শুনে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ^াস উঠেছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন পেঁয়াজের আমদানি হলে দাম কমে যাবে। অন্যথায় পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে। এ দিকে সরকার ন্যায্যমূল্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে রাজধানী ঢাকার ৩৫টি পয়েন্টে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হবে। সারাদেশেও এ দামে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। গতকাল হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারী ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে জানান, রবিবার সকালে হঠাৎ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয় ভারত থেকে আর বাংলাদেশে পেঁয়াজ আসছে না। ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দিয়েছে। হিলি স্থলবন্দরসহ কোন স্থলবন্দর দিয়ে আর পেঁয়াজ দেশে আসছে না। হবিগঞ্জ শহরের পাইকারী ব্যবসায়ীরা আর নতুন করে পেঁয়াজের আমদানি করতে পারছেন না। রবিবার বিকেলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। গতকাল সোমবার সেই পেঁয়াজ চৌধুরী বাজারে খুচরা ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও শহরের বিভিন্ন স্থানে দোকানগুলোতে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গ্রামের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা ১২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রকি মিয়া জানান, রবিবার সকালে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারী বিক্রি করেছেন ৫২ টাকা ও খুচরা ৫৫ টাকা দরে। রবিবার বিকেলে হঠাৎ করেই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানী বন্ধ করে দিয়েছে। সাথে সাথে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৫/৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পেঁয়াজের নতুন আমদানি না হওয়ায় গতকাল আমাদের সেই পেঁয়াজ পাইকারী ৯০ টাকা ও খুচরা ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের খুচরা বাজারে পেঁয়াজ দামে বিক্রি করতে হয়েছে। চৌধুরী বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সুমন রায় জানান, পেঁয়াজের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতকাল প্রতি কেজি পেয়াজ ১০৫/১১০ টাকা দামে বিক্রি করতে হয়েছে। পেঁয়াজের আমদানি না হলে আরো দাম বাড়ার আশংকা রয়েছে। বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া বাজারের মুদিমাল ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম আলী জানান, রবিবার তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। গতকাল বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে তাদের প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১৫/১২০ টাকা দামে বিক্রি করতে হয়েছে। তবে তাদের দোকানে পেঁয়াজ সংগ্রহে না থাকায় এখন আর বিক্রি করতে পারছেন না। হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারের পাইকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাদল দেব জানান, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি না হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি এলসি পেঁয়াজ রবিবার পাইকারী ৭০/৭৫ টাকায় কেজি বিক্রি হয়েছে। গতকাল সোমবার ৯০/৯৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা যেখান থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতাম সেখান থেকে আর পেঁয়াজ সংগ্রহ বা ক্রয় করতে পারছি না। তারা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন তাদের গোডাউনে পেঁয়াজ নেই। তিনি বলেন পেঁয়াজের আমদানি হলে দাম কমে যাবে। আমরা আশা করি সরকার শীঘ্রই পেঁয়াজের আমদানি করবে। পেঁয়াজের আমদানি হলে দাম কমে যাবে। পুরান বাজারের রহমান ব্রাদার্সের পরিচালক পাইকারী পেয়াজ ব্যবসায়ী সিহাব উদ্দিন জানান, গত বৃহস্পতিবার স্থল বন্দর থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করেছিলেন। এরপর আর সেখান থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করতে পারছেন না। পেঁয়াজ ক্রয় করতে না পাড়ার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না। দু’দিন ধরে ১/২ বস্তা করে ক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসলে দাম আরো বাড়বে। বার্মার পেয়াজ চিটাগাং দিয়ে প্রবেশ করছে। সেই পেঁয়াজ আমাদের ৭৫/৮০ টাকা কেজি পাইকারী ক্রয় করতে হচ্ছে। গাড়ী ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে সেই পেয়াজ আমাদের পাইকারী ৮৫/৯০টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।