মাত্র ১৫ হাজার টাকা সুদে ধার নিয়ে পরিশোধ করতে না পারায় চেক ডিজঅনার মামলায় ৬ মাসের সাজা হয় ফারুক মিয়ার

পরিবারের অভিযোগ পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন ফারুক মিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে ১৫ হাজার টাকা সুদের চেক জালিয়াতি মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর ফারুক মিয়া নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের পিটুনিতে ফারুক মিয়া মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। অপরদিকে পুলিশ বলছে, দেয়াল টপকানোর সময় আহত হয়ে নির্মাণ শ্রমিক ফারুক মিয়া মারা গেছেন। অন্যদিকে চিকিৎসক বলছেন শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে না। এদিকে ওই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। মৃত ওই ব্যক্তি শহরের মোহনপুর এলাকার সঞ্জব আলীর ছেলে ফারুক মিয়া।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার ফারুক মিয়া একই এলাকার আব্দুল মান্নানের নিকট থেকে ৬/৭ মাস পূর্বে ১৫ হাজার টাকা সুদে ধার নেয়। তখন সে ব্যাংকের দু’টি চেক দেয়। সুদ আসলসহ বর্তমানে উক্ত টাকা ৩৫ হাজারে দাঁড়ায়। সম্প্রতি সে আসল ১৫ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু তারপরও আব্দুল মান্নান সুদের টাকার জন্য উক্ত চেক দিয়ে পৃথক দু’টি মামলা করে দেয়। মামলায় ফারুক মিয়ার ৩ মাস করে ৬ মাসের সাজা হয়। এর প্রেক্ষিতে রবিবার দিবাগত রাতে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার একদল পুলিশ ফারুক মিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। রাতেই তাকে আহত অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ পুলিশের পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে সদর হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রসহ এলাকার লোকজন। এ ঘটনার পর পরই ফারুক মিয়ার স্বজনসহ এলাকাবাসী ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিচারের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলে ফারুক মিয়া নিহতের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানানো হয়।
মৃত ফারুক মিয়ার ছেলে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার মাসুক জানান, তার বাবার বিরুদ্ধে চেকের মামলা ছাড়া অন্য কোন মামলা নেই। রাতে পুলিশ তার বাবাকে সুস্থ অবস্থায় নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে তাকে নির্যাতন করলে তিনি মারা যান। তিনি বলেন, আমরা এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
নিহতের ভাই নূরুজ্জামান জানান, রাতে পুলিশ তার ভাইকে আটক করে নিয়ে এসেছে। এরপর তাকে নির্যাতন করেছে। তিনি গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করি।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মিজানুর রহমান মিজান জানান, ফারুক মিয়ার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মিথুন রায় জানান, ভর্তি হওয়ার পর রোগী নিজেই বলছিলেন তার পেটে ব্যথা অনুভব করছেন। এরপর আমরা তার শরীরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। তার আঘাতের নমুনায় বলছে আঘাতের কারণে মৃত্যু নাও হতে পারে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে না।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম পিপিএম সেবা) জানান, ময়নাতদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবে না। এদিকে গতকাল বিকেলে ফারুক মিয়ার লাশের ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। নিহত ফারুক মিয়ার লাশ বাড়িতে নেয়ার পর তাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার লোকজন ভিড় জমান। এ সময় নিহতের স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।